আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী বুনো শাকের রান্না প্রতিযোগিতা ও খাদ্য উৎসব। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিমজেলেখালী কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। উপকূলীয় গ্রামীণ নারী ও পুরুষেরা উৎসাহের সঙ্গে এতে অংশ নেন।
সবুজ সংহতি, স্থানীয় জনসংগঠন এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় পশ্চিমজেলেখালী গ্রামের পাঁচটি স্থানীয় জনসংগঠনের ১৬ জন নারী ও পুরুষ অংশ নেন। তারা বাড়ির আঙিনা, খাল-বিল, জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা কচুশাক, ডুমুর, কলমিশাক, থানকুনি, শাপলা, কলার মোচা সহ মোট ১৬ প্রকারের দেশীয় ও বুনো শাকের পদ রান্না করে পরিবেশন করেন।
নির্ধারিত সময়ে রান্না শেষে বিচারকদের উপস্থিতিতে স্বাদ গ্রহণ কর্মসূচি শুরু হয়। অংশগ্রহণকারীরা তাদের রান্নার প্রধান উপকরণ বুনো শাক সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর সাত সদস্যের বিচারকমণ্ডলী স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উপস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রতিযোগিতায় বুনো আমড়া রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন যুব কৃষক প্রশান্ত নস্কর। কলমি শাক রান্না করে দ্বিতীয় হন শিক্ষার্থী জবা এবং থানকুনি রান্না করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন কৃষাণী ঝরনা রানী মন্ডল।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সবুজ সংহতির সভাপতি ডা. যোগেশ মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবাশীষ গায়েন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, শিক্ষক হেমা রানী, কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রি, বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল ও মারুফ হোসেন মিলনসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত উদ্ভিদ-প্রাণবৈচিত্র্য মানুষ ও প্রাণীর খাদ্য ও ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হলেও জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারের কারণে এইসকল উদ্ভিদ বৈচিত্র্য এবং তাদের প্রাপ্তিস্থান হারিয়ে যাচ্ছে। যা গ্রামীণ মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস। তারা এই সম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. যোগেশ মন্ডল বলেন, "এই রান্না প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃতির সকল উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য নতুন প্রজন্মের সাথে গ্রামীণ নারীদের একটি সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে লোকায়ত জ্ঞান প্রসারিত হবে, যা সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন