টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলাজুড়ে জোঁকের অস্বাভাবিক উপদ্রব দেখা দিয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় জোঁকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে রোপা আমন ধান কাটাসহ দৈনন্দিন কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলার দাড়িয়াপুর, গজারিয়া, মুচারিয়া পাথার, বড়চওনা, কচুয়াসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই উপদ্রব তীব্র আকার ধারণ করেছে। ধানখেত, ছোট জলাশয় থেকে শুরু করে বসতবাড়ির আঙিনা পর্যন্ত জোঁকের আনাগোনায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু যেমন—গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার শরীর থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে জোঁক। এমনকি হাঁস-মুরগি ও শিশুরাও এর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভেজা মাটি বা ঘাসের সংস্পর্শে এলেই জোঁক শরীরে আক্রমণ করছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। জোঁকের ভয়ে অনেক শ্রমিক মাঠে ধান কাটতে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন। মুচারিয়া পাথার গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, জোঁকের কারণে খেতখামারে কাজ করতে ভয় লাগছে। গরু-ছাগলের নাকে জোঁক ঢুকে রক্ত শোষণ করছে। এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে অনেকে লবণ, তামাকের গুঁড়া এবং ডেটল মিশ্রিত পানি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ আবার পায়ে পলিথিন পেঁচিয়ে বা গামবুট পরে মাঠে নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুধু কৃষিকাজই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়েছে। পাথারপুর জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের মাঠেও জোঁকের আনাগোনা রয়েছে, যার কারণে অনেক সময় ক্লাস ব্যাহত হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন গণমাধ্যমকে বলেন, "এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাড়ির আঙিনার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে জোঁকের উপদ্রব বেড়েছে। আমরা কৃষকদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।"
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জোঁকের উপদ্রব বেশি। গবাদিপশুর সুরক্ষায় আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন