ভেনেজুয়েলা থেকে সম্প্রতি যাত্রা করা আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম। চলতি মাসে ভেনেজুয়েলার উপকূলে তেল বহনকারী জাহাজ জব্দ করার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপটি আসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর অবরোধ ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই।
সর্বশেষ জাহাজ জব্দের ঘটনায় ভেনেজুয়েলা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং একে ‘চুরি ও অপহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটি এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের সম্পদ চুরির চেষ্টা করার অভিযোগ তুলেছে। ভেনেজুয়েলা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই কর্মকাণ্ড শাস্তি ছাড়া যাবে না।’
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করবে।
এই অভিযানটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড, যা চলতি মাসের শুরুতে পরিচালিত অভিযানের মতোই ছিল। একটি বিশেষায়িত কৌশলগত দল জাহাজটিতে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থাতেই জাহাজটি জব্দ করা হয়।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনেই কোস্ট গার্ড পরিচালিত হয়। পরে ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে অভিযানের একটি ভিডিও শেয়ার করেন।
তিনি লেখেন, ‘২০ ডিসেম্বর ভোরে পরিচালিত অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড, যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ভেনেজুয়েলায় সর্বশেষ নোঙর করা একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে।’
নোয়েম সাত মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে ‘সেঞ্চুরিজ’ নাম লেখা একটি জাহাজের ডেকে মার্কিন হেলিকপ্টার অবতরণ করতে দেখা যায়।
তিনি আরও লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলের অবৈধ চলাচল বন্ধে কাজ চালিয়ে যাবে, যা এই অঞ্চলে নার্কো-সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেয়। আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব।’
বিবিসি ভেরিফাইয়ের দেখা নথি অনুযায়ী, ‘সেঞ্চুরিজ’ একটি পানামা-নিবন্ধিত জাহাজ। তবে গত পাঁচ বছরে এটি গ্রিস ও লাইবেরিয়ার পতাকাও বহন করেছে। জাহাজটি বর্তমানে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজের তালিকায় নেই।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবিয়ান সাগরে তাদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে এবং ভেনেজুয়েলার কথিত মাদক পাচারকারী নৌযানের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
তবে এসব নৌযান মাদক বহন করছিল— এমন কোনও প্রকাশ্য প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি। এ কারণে হামলাগুলো নিয়ে কংগ্রেসে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ওপর বাড়তি নজরদারি ও প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘কার্তেল দে লোস সোলেস’ নামে একটি ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন পরিচালনার অভিযোগ করেছে, যা তিনি অস্বীকার করে আসছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, মাদুরো ও ওই গোষ্ঠী ‘চুরি করা’ তেল ব্যবহার করে নিজেদের অর্থায়ন করছে এবং এর মাধ্যমে মাদক সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণ পরিচালিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় জাহাজ জব্দের পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে লেখেন, অবৈধ অপরাধী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে যুক্তরাষ্ট্র অবিচলভাবে সামুদ্রিক বাধাদান অভিযান চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘সহিংসতা, মাদক ও বিশৃঙ্খলা পশ্চিম গোলার্ধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’
বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রমাণিত তেল মজুতের দেশ ভেনেজুয়েলা সরকারি ব্যয় মেটাতে তেল রপ্তানি আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
মন্তব্য করুন