ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম চালিকাশক্তি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা ও অচলাবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেম্বারের সভাপতির আত্মগোপন, ব্যবস্থাপনার শৈথিল্য এবং কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের মতো নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বর্তমানে প্রায় থমকে গেছে।
জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো ময়মনসিংহেও ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই সময় ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর কার্যালয়েও আন্দোলনকারীরা আগুন দেয়। পরিবেশ শান্ত হলেও পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি; কার্যালয়ে প্রায়শই থাকে সুনসান নীরবতা।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মেয়াদ শেষ না হওয়ায় কাগজে-কলমে তিনিই এখনো চেম্বারের সভাপতি। এই পরিস্থিতিতে বিগত বছর একটি সভাও করা হয়নি। চেম্বারের পুরাতন অনেক সদস্য সদস্যপদ নবায়ন করছেন না, ফলে সদস্য সংখ্যা কমছে। একইসঙ্গে নতুন সদস্য ভর্তি ও নবায়ন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে (আগে ছিল ১ হাজার টাকা, বর্তমানে ৫ হাজার টাকা), যা নতুন সদস্য হতে এবং পুরাতনদের নবায়ন করতে নিরুৎসাহিত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি এফবিসিসিআই-এর প্রথম শ্রেণির সদস্য। সর্বশেষ সভাপতি পদে ছয় বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমিনুল হক শামীম। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। চেম্বারে বর্তমানে সহসভাপতি শংকর সাহা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্য সহ মোট কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা ৪০০ থাকলেও বর্তমানে তা কমে প্রায় ২৫০ জনে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে নগরীর জুবলিঘাট এলাকায় অবস্থিত চেম্বার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নীরবতা। সুবল বিশ্বাস নামের একজন অফিস সহায়ক দায়িত্ব পালন করছেন। সহসভাপতি শংকর সাহা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্যকে পাওয়া যায়নি। তবে নবায়ন করতে আসা এক সদস্যের প্রতিনিধি আব্দুল খালেদ নবায়ন ফি বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধাজনক সময় পার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে অফিস সহায়কের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণমাধ্যমকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্যালয়ে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং আলমারি লুটপাট হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়া চেম্বারে সহসভাপতি শংকর সাহা মাঝেমধ্যে আসেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চেম্বারের সভাপতির নাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে চেয়ার ফাঁকা। থমকে যাওয়া কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যার জন্য নির্বাচনের দাবি উঠেছে।
এদিকে, চেম্বারের অবস্থা কিংবা কার্যক্রম নিয়ে সহসভাপতি শংকর সাহা গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতেই রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, সভাপতির অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না। একপর্যায়ে তিনি শুধু বলেন, "চেম্বারের সদস্য সংখ্যা কমছে। আমরা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি।"
একই ধরনের অবস্থায় রয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্য। গণমাধ্যমকে তিনি সরাসরি কার্যালয়ে না এলে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে অফিস সহায়ক সুবল বিশ্বাস জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে চাকরি করছেন এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই নেতৃত্বে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তিনি কার্যালয়ে আগুনের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বলেন, সুন্দর পরিপাটি থাকা চেম্বারের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটও হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী নির্বাচনের পর চেম্বারে নতুন নেতৃত্ব আসবে।
চেম্বারের সদস্যরা মনে করেন, নতুন নেতৃত্ব ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা না এলে ময়মনসিংহের ব্যবসায়িক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। সারা-মাহিদ (আমদানি-রপ্তানি) এজেন্সির ঠিকাদার ও চেম্বারের সদস্য মোঃ শামসুল আলম বলেন, চেম্বারের কার্যক্রম থেমে গেলে স্থানীয় বিনিয়োগের গতি কমে যায়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, তিনি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক হিসেবে ময়মনসিংহে এসেছেন। চেম্বারের সভাপতি আছেন কি নেই, তা তার জানা নেই। তিনি কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে কি না তা খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন