দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি থেকে মুক্ত না থাকলে দেশকে সামগ্রিকভাবে ভালো করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে দুদকে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সদস্যদের কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চেয়ারম্যান ড. মোমেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের সম্পদ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত আমরা ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ না করলে সাধারণ জনগণ ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে বাধ্য।
ড. মোমেন বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম আওয়াজ তুলতে পারে।
তিনি জানান, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। এ কারণে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তা ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘যদিও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন, তবুও দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, দুদক মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ-আল-জাহিদ, র্যাক সভাপতি আলাউদ্দিন আরিফ এবং সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি ছিল সাংবাদিকদের দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত।
ড. মোমেন আরও বলেন, দুর্নীতি শুধু সরকারি তহবিলের ক্ষতি করে না, বরং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি থেকে রক্ষা না পেলে দেশের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে সকল স্তরের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো- তদন্তের আওতায় রয়েছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি থেকে মুক্ত না থাকলে নিচের স্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধও অসম্ভব।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে দুর্নীতি চর্চা এবং অনিয়মের বিষয়টি জনগণের সামনে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সচেতনতা ও সাংবাদিকদের রিপোর্টিং দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক।
ড. মোমেন আরও উল্লেখ করেন, ‘দেশের মানুষ এবং গণমাধ্যম যদি একসাথে কাজ করে, তবে শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে রোধ করা সম্ভব।’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশকে শুদ্ধ ও স্বচ্ছ রাখা সম্ভব হবে।
ড. মোমেনের মতে, দায়িত্বশীল প্রশাসন, শক্তিশালী দুর্নীতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে দেশের উন্নয়নশীল নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের উদ্বুদ্ধ করেন, দেশের দুর্নীতি মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে।
উল্লেখ্য, এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও রিপোর্টিংকে আরও কার্যকর করা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা দুদকের দুর্নীতি তদন্ত প্রক্রিয়া, আইনি পদক্ষেপ এবং শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পান।
চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের এই মন্তব্য দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি রোধ না করলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পেতে পারে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ এবং সাংবাদিকদের অবদান দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সকালবেলা/এমএইচ