ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর মধ্যে চলমান প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত বিতর্ক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক নির্বাচন করতে হবে। যদি তারা তা না করে, তাহলে ইসি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাদের জন্য অন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়ে নিবন্ধনের জন্য উপযুক্ত নয়। ১৯ অক্টোবরের মধ্যে তারা বিকল্প প্রতীকের চাহিদা আমাদের জানাবে। না জানালে কমিশন স্বীয় পদ্ধতিতে প্রতীক বরাদ্দ করবে।’ তিনি আরও বলেন, শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করা দরকার নেই এবং তালিকায় না থাকায় বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
ইসি সচিবের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আগামী রোববারের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধির তফসিলে থাকা নির্ধারিত তালিকা থেকে দলটির জন্য প্রতীক বাছাই করতে হবে। তালিকা অনুযায়ী প্রতীক বাছাই না করলে ইসি স্বীয় পদ্ধতিতে প্রতীক বরাদ্দ করবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিশন নিশ্চিত করতে চায় যে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সময়মতো সম্পন্ন হবে। এনসিপি শাপলা প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন নেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তবে সচিব জানান, ‘শাপলা প্রতীক না থাকলেও নির্বাচন কমিশন কমিশন নীতিমালা অনুযায়ী অন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে। এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে কিনা তা সময়ই দেখাবে।’
প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে তখনকার বিচারপতি আব্দুর রউফ কমিশন পাঁচটি মূল নীতি অনুসরণ করে প্রতীক বরাদ্দ করে : ১. ১৯৭৯ সালের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের বরাদ্দকৃত প্রতীক যথাসম্ভব বহাল থাকবে। ২. রাজনৈতিক দলের অতীত ও বর্তমান সদস্য সংখ্যা, পূর্ব নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনায় রাখা হবে। ৩. যে সব দল শুধুমাত্র বিশেষ একটি প্রতীকের জন্য আবেদন করবে, তাদের জন্য প্রতীক সংরক্ষিত থাকবে। ৪. একই প্রতীক চাইলে একাধিক দলের মধ্যে সমঝোতা করতে বলা হবে; ব্যর্থ হলে কমিশন স্বীয় পদ্ধতিতে প্রতীক বরাদ্দ করবে। প্রয়োজনে লটারি পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হবে। ৫. প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে একাধিক পছন্দ থাকা দলের চাহিদা যথাসম্ভব বিবেচনা করা হবে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৪৩টি দল আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ১২১টি দল বাদ পড়ে এবং বাকি ২২টি দলের বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছিল। নির্বাচন কমিশন এখনও ১২টি দলের পুনঃ যাচাই সম্পন্ন করছে।
এ বিষয়ে সচিব জানান, ‘কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুসন্ধান চলছে। আগামী সপ্তাহে এই ১২ দলের মধ্যে কে নিবন্ধন পাবে তা চূড়ান্ত করা হবে।’ নির্বাচন কমিশন ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে ৫০টি সম্ভাব্য প্রতীকের তালিকা থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পছন্দ জানানোর জন্য চিঠি দিয়েছিল।
তবে নির্ধারিত সময়ে এনসিপি শাপলা প্রতীক বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে, যা নির্বাচন কমিশন মেনে নায়নি। ইসি অনড় অবস্থানে রয়েছে যে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
এনসিপির পক্ষ থেকে শাপলা ছাড়া নিবন্ধন না নেওয়ার ঘোষণা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি করেছে। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসির স্বতঃপ্রণোদিত প্রতীক বরাদ্দ প্রক্রিয়া দলের মধ্যে অসন্তোষ এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে ইসি মনে করে, এটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সময়মতো সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এনসিপি নেতারা এখনও বিকল্প প্রতীকের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কমিশন তাদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত রেখেছে। এরপরও দল যদি প্রতীক নির্বাচন না করে, কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে অন্য প্রতীক বরাদ্দ করবে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতীক বরাদ্দের এই ইস্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম গুরুত্ব পাচ্ছে। ইসির নীতিমালা অনুযায়ী সময়মতো বিকল্প প্রতীক না নিলে কমিশন স্বীয় উদ্যোগে প্রতীক বরাদ্দ করবে। এর ফলে নির্বাচনি মাঠে এনসিপি ও অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা আগামী কয়েকদিনের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য। তদুপরি, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে নির্বাচন নির্ভরযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে। তবে এনসিপি ও ইসির মধ্যে চলমান প্রতীক বিতর্ক আগামী নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে।
সকালবেলা/এমএইচ