মাহমুদ বিন মারুফ
প্রকাশ : বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের নবান্ন উৎসব

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের নবান্ন উৎসব

আজকের প্রজন্ম নবান্নের উৎসবকে চেনে গল্পে, সিনেমায়, অথবা পাঠ্যবইয়ের পাতায়। মাঠে নতুন ধান ওঠে ঠিকই, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য আর অপেক্ষার উত্তেজনা। আধুনিকতার ছোঁয়া, ব্যস্ততার চাপ এবং ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার কারণে গ্রামবাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য নবান্নের অনুষ্ঠান আজ যেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। অগ্রহায়ণ মাস এলেই একসময় গ্রামবাংলা জুড়ে পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণ, আত্মীয়-স্বজনের সমাগম এবং নতুন ধানের ভাত রান্নার যে ধুম পড়ে যেত, তা এখন সব কল্পনায়। সবকিছু ধীরে ধীরে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির পাতায়।

বর্তমানে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে আমন ধান কাটার ব্যস্ততা চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। হেমন্ত শেষে শীতের আগমনী বার্তা ছুঁয়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নতুন ধানের মাদকতা, আর খুশির হাসি ফুটছে কৃষকের ক্লান্ত চোখে। সোনালি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকের ঘরে যেন ফিরে আসছে আশার আলো।

তবে এই আনন্দের মাঝেও মিশে আছে আক্ষেপের সুর। হাতীবান্ধার ৮৬ বছর বয়সী কৃষক আজিজার রহমান বলেন, “পাকিস্তান পিরিয়ডে অভাব ছিল, কিন্তু নতুন ধান কাটার আনন্দ ছিল ভরপুর। ধান ঘরে তোলার পর পিঠা-পোলাও বানাতাম, হুজুরকে ডাকতাম, সবাই মিলে খেতাম। এখন আর সেই আনন্দ নেই। আবাদ বাড়ছে, কিন্তু আনন্দ কমছে। এখনকার বাচ্চারা নবান্ন মানেই না। তাই গ্রামের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।”

কৃষকদের এই উৎসব হারানোর পেছনে সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। কৃষক মজিবার রহমান বলেন, “আগে নতুন ধান আনতাম, চাউল বানিয়ে ভাত রান্না করতাম। প্রথম ভাত হুজুরকে খাওয়াতাম, পরে নিজেরা খেতাম। দোয়া খায়ের করতাম। এখন এসব আর হয় না। অনেকে বলে এই আয়োজন নাকি ‘বেদাত’। তাই নবান্ন আর পালন হয় না। কালই ধান কাটলাম, শুকিয়ে আজই খাওয়া শুরু—সেই নিয়ম-রেওয়াজ আর নাই আমাদের মাঝে নাই।”

অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে আমিনা বেগম বলেন, “আগে মানুষ ঐতিহ্যকে মানত, পরস্পরকে দাম দিত। এখন কেউ কাউকে মানে না। নতুন চালের ভাত রাধতাম, মাছারের দুয়ারে রাখতাম, মোলবি ডাকতাম, মিলাদ পড়াতাম। এখন এসব নেই। মানুষের ভিতর ঈমান-আচরণ কমে গেছে। সময় বদলাইছে, ঐতিহ্যও হারাই যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, গ্রামের মাঠে সোনালি ধান হাওয়ায় দুললেও নবান্নের উৎসব আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের ঘরে ধান ঢুকছে, কিন্তু উৎসবের উচ্ছ্বাস আর আগের মতো নেই। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির শেকড়ের এই চিরন্তন ঐতিহ্য।

মারুফ/সকালবেলা

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

'আমি মেয়ে হতে পারি, কিন্তু বোকা মেয়ে নই’

1

আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ গঠিত হতে হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

2

হাসিনা–কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ

3

নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২ কর্মকর্তাকে বদলি করল ইসি

4

রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি ফ্যাসিবাদীরা: গোলাম পরওয়ার

5

অবৈধ ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার অপসারণের নির্দেশ ৭ দিনের মধ্যে

6

রাজধানীতে মা-মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা: মামলার এজাহার থেকে যা

7

২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আবারো ঢাকায় ভূমিকম্প

8

গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতসহ ৮ দলের দেশব্যাপী বিক্ষোভ সোমব

9

রাজশাহীতে এনসিপির পাঁচ নেতার পদত্যাগ, কমিটি বিলুপ্তের দাবি

10

আরমানিটোলায় জবি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

11

বন্ধুকে হত্যার পর রক্তমাখা কুড়াল নিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ

12

বাবরি মসজিদ ভাঙার ৩৩ বছর পর পুনর্নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর

13

সড়ক দুর্ঘটনায় ঝড়ে গেলো ক্রীড়া সাংবাদিক জহির ভূইয়ার প্রা

14

আ.লীগের ‘হত্যাযজ্ঞ ও দুর্নীতি’ ভুলে গেলে চলবে না: সালাহউদ্দি

15

মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণে বেগম জিয়া

16

হাদি এখনও আশঙ্কামুক্ত নন, অবস্থা অপরিবর্তিত: ইনকিলাব মঞ্চ

17

বিচ্ছেদের পর ফের প্রেমে মজেছেন বাঁধন

18

বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকদের: মমতা

19

‘সোলজার’-এর লুক প্রকাশ্যে আসতেই নেটিজেনদের মাঝে সমালোচনার ঝড়

20
সর্বশেষ সব খবর