বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত তাদের চেতনা, রক্ত এবং ডিএনএ-তে গণতন্ত্রের বীজ নেই।
তিনি বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রশাসনের কোনো স্তরেই গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ রাখা হয়নি। তার মতে, এটিই হলো 'আওয়ামী গণতন্ত্রের' নমুনা। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের চেতনায়, রক্তে, ডিএনএ-তে গণতন্ত্রের বীজ নেই। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই তা প্রমাণ করেছেন, আর তার কন্যা শেখ হাসিনা আরও স্পষ্টভাবে তা দেখিয়েছেন।"
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও পরিবর্তনের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কোনো না কোনো সময় উন্মুক্ত হতে বাধ্য। তিনি বলেন, "আওয়ামী বাকশালী সরকার সেসময় এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি বিকল্প পথের প্রয়োজন হয়েছিল।" তিনি উল্লেখ করেন, ৭ নভেম্বরের ঘটনা এটাই শেখায় যে, যখনই প্রয়োজন হবে, দেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বাংলাদেশের মানুষ, সিপাহী-জনতা, এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি বাংলাদেশে ৭ নভেম্বর সংঘটিত না হতো, তাহলে দেশের কী পরিস্থিতি দাঁড়াত? তিনি তৎকালীন সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাত্র তেরো মিনিটের মাথায় একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সংবিধান সংশোধন করেন।
বিএনপির এই নেতা চতুর্থ সংশোধনীর কথা তুলে ধরে বলেন, এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি সরাসরি নির্বাচিত না হয়েও নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। সেই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারিত ছিল এবং একই সংসদকে পুনরায় বৈধ ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ওই সংশোধনীর মাধ্যমেই শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন যে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী পর্যন্ত সবাইকে একটি মাত্র দলে যোগ দিতে হবে। বাকশালের সদস্য না হলে কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। বিচার বিভাগকেও রাষ্ট্রপতির অধীনে আনা হয়, ফলে প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যে কাউকে 'অসদাচরণ'-এর অভিযোগে বরখাস্ত করতে পারবেন—এই বিধানও তখন যুক্ত করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তনের অধিকার থাকে না, সেখানে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উৎসাহিত হয়, যা বিশ্ব ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে। তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের রাজনীতি সবসময় মিথ্যায় ভরপুর। শেখ মুজিব সাংবিধানিকভাবে উন্মুক্তভাবে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। আর শেখ হাসিনা একই বাকশাল বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন গণতন্ত্রের মুখোশে, প্রহসনের ভোটের ছদ্মবেশে। একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের এটাই ছিল তার লক্ষ্য।"
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন