রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (পণ্য রাখার স্থান) আগুন পুরোপুরি নিভেছে। প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর গতকাল রোববার বিকালে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। এ দুর্ঘটনায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য-সরঞ্জাম পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম জানান, আগুনে সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে তৈরি পোশাক, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এতে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছেন। গতকাল অনেক ব্যবসায়ী তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য এসেছিলেন বিমানবন্দরে। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় অন্তত এক মাস রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এতে বিদেশি অর্ডারগুলো বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
গতকাল সকালে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথেই কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুধু বিদেশগামী এবং বিমানবন্দরে যাতায়াতের গাড়ি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছিল পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ভেতরে কাজ করছিলেন। তখনো দুই পাশ থেকে পানি দিচ্ছিলেন তারা।
কয়েকজন ফায়ার ফাইটার বলেন, কার্গো ভিলেজের ভেতরে মিথেন গ্যাস আছে। এজন্য তারা অক্সিজেন নিয়ে কাজ করছিলেন। আগুন পুরো নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে আরো কদিন সময় লাগবে। এদিন বিমানবন্দরের সামনে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। তবে বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক আছে।
কার্গো ভিলেজের আট নম্বর ফটকের সামনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় আগুন লাগে। প্রথমদিকে সামান্য ধোঁয়া বের হয়। ওই সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি ।
কার্গো ভিলেজ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাকের স্যাম্পল (নমুনা) পুড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানিতে লিড টাইমে অন্তত এক মাস পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এখন আবার নতুন করে স্যাম্পল আনা, তৈরি এবং ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনুমোদন নেওয়া পর্যন্ত অন্তত এক মাস সময়ের প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, দুদিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি ছিল। এ দুদিনে উড়োজাহাজে যত পণ্য এসেছে, সেগুলো হস্তান্তরে কোনো কাজ হয়নি। আগুনে সবই পুড়ে গেছে। কুরিয়ার সার্ভিস সেকশন শেডের বাইরেও উড়োজাহাজ থেকে অনেক পণ্য নামিয়ে রাখা হয়েছিল। সেগুলোও ছাই হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে।