আসন্ন সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই চরম অস্থিরতা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিএনপির ৩৩ জন নেতাকর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, যা আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আহমেদ আযম খান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক মণ্ডলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন। গত ২০ নভেম্বর এই হুমকির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, "আপনি সখীপুর-বাসাইলে আসুন, পিঠের চামড়া থাকবে না... আপনাকে খেয়ে ফেলব।" এই ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এর প্রতিবাদে গত রবিবার সখীপুর ও টাঙ্গাইল শহরে মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসব কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও অংশ নেন।
'ভুয়া' মুক্তিযোদ্ধা দাবির অভিযোগ: এদিকে, বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে আযম খানের নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করার বিষয়টি। রবিবার এক পথসভায় তিনি দাবি করেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন এবং বাসাইল অঞ্চলের সংগঠক ছিলেন। তবে এই দাবির পর সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান সাজু এক ভিডিও বার্তায় একে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, "আযম খান মুক্তিযোদ্ধা—এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ বা ইতিহাস নেই। তিনি নিজেই বহুবার বলেছেন তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। এই ভুয়া দাবি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান।"
নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ: আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগে সখীপুর বিএনপিতে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাজাহান সাজু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসেদ মাস্টারসহ ১১ জন নেতা পদত্যাগ করেন। পরদিন ওলামা দলের আরও ২২ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সখীপুরে ছুটে যান। তারা বিষয়টিকে হালকা করে গণমাধ্যমকে বলেন, "বিএনপি সাগরের মতো দল, এখান থেকে দু-এক বালতি পানি চলে গেলে কিছু হয় না। আযম খানের বিজয় সুনিশ্চিত দেখে ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ঘটাচ্ছে।"
এ বিষয়ে আহমেদ আযম খান গণমাধ্যমকে বলেন, "আমার বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে এবং ধানের শীষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে, কোনো ষড়যন্ত্রই বিজয় ঠেকাতে পারবে না।"
তবে স্থানীয় বিএনপির একাংশ মনে করছে, দায়িত্বশীল নেতাদের এমন বিতর্কিত আচরণ ও গণপদত্যাগ আগামী নির্বাচনে দলের ফলাফলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন