দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রকল্পে ৩৮ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে খরচ ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য এক লাখ ৩১ হাজার টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রশিক্ষণে এই অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রশ্ন উঠেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এত ব্যয় অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক, যা প্রকল্পটিকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় সারা দেশে ৩৮ হাজার ৪০০ জন শিক্ষিত তরুণকে মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৬ কোটি টাকা, যেখানে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য এক লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
অথচ একই অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত দুই মাসের এআই প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রকল্পে জনপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। ৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের আরেকটি চলমান প্রকল্পে জনপ্রতি খরচ হচ্ছে প্রায় ৮৯ হাজার টাকা। এই অবস্থায় মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণের প্রস্তাবিত এই প্রকল্প ব্যয়কে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ও বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান বলে মনে করছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
যদি ব্যয় বেশি মনে হয়, তাহলে কমিয়ে যৌক্তিক করতে বলা হবে। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় জানতে চাওয়া হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এটি দেশের ৬৪ জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাজুড়ে বিস্তৃত হবে। প্রতিটি জেলায় বছরে আটটি ব্যাচে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেবেন। প্রশিক্ষণের মেয়াদ হবে তিন মাস বা ৩০০ ঘণ্টা।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস ও বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে। অংশগ্রহণকারীদের বাছাই হবে অনলাইন নিবন্ধন, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। প্রশিক্ষণের সময় প্রতিদিন খাবার ভাতা ৩০০ টাকা, স্টাইপেন্ড ২০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণ শেষে ইন্টার্নশিপ সহায়তা হিসেবে আট হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) সনদ প্রদান করবে।
প্রকল্পে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত থাকবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের তদারকি করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। মান বজায় রাখতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যৌথভাবে একটি স্ট্যান্ডার্ড কারিকুলাম তৈরি করবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহেরও পরিকল্পনা রয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশে বর্তমানে ১৫ কোটির বেশি মোবাইল সংযোগ রয়েছে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফলে দক্ষ মোবাইল টেকনিশিয়ানের চাহিদা বেড়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তরুণরা প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারবেন, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
তবে সরকারি নথিতে দেখা গেছে, প্রকল্পের মধ্যে প্রশিক্ষণ ব্যয় ৪৯১ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় (বেতন-ভাতা, যানবাহন, অফিস খরচ) ধরা হয়েছে চার কোটি ৯৮ লাখ টাকা, আর মূলধনী ব্যয় তিন কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয়ের বড় অংশই যাবে চালান, ভাতা ও প্রশাসনিক খাতে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।