দৈনন্দিন জীবনে নবীজি (সা.)-এর সুন্নত বা জীবনাচরণগুলো কেবল আধ্যাত্মিক নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ও কল্যাণকর। আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানও এই অভ্যাসগুলোর উপকারিতা স্বীকার করে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এমন ১০টি সুন্নত হলো:
১. হাত ধোয়া ও কুলি করা: নবীজি (সা.) খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুতেন এবং খাওয়ার পর কুলি করতেন। এটি জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে, হজমের সমস্যা কমায় এবং মুখগহ্বর ও দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে।
২. খাদ্য গ্রহণে সংযম: ইসলামে পরিমিত আহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) শিখিয়েছেন, পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে (সুনানে তিরমিজি, ২৩৮০)। এই অভ্যাস স্থূলতা, গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে রক্ষা করে।
৩. মিসওয়াক করা: দাঁত ও মুখের পরিচ্ছন্নতায় তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি ঘুমের আগে-পরে, ঘরে প্রবেশের সময় এবং অজুর আগে মিসওয়াক করতেন। এটি দাঁত পরিষ্কার রাখে, মাড়ি মজবুত করে এবং হজমে সাহায্য করে।
৪. সকালের হাঁটা: ইসলাম সকালের নির্মল পরিবেশে হাঁটতে উৎসাহিত করেছে। নবীজি (সা.) নিজেও প্রায়ই মসজিদে কুবায় হেঁটে যেতেন। সকালের হাঁটা শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং সকালের রোদ ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণ করে।
৫. কায়লুলা (দুপুরের বিশ্রাম): দুপুরের খাবার গ্রহণের পর সামান্য বিশ্রাম নেওয়াকে কায়লুলা বলে। নবীজি (সা.) এটি করতে উৎসাহ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলেন, দুপুরে ১০ থেকে ৪০ মিনিট ঘুমালে শরীর ও মন সতেজ হয়, কর্মস্পৃহা বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।
৬. ডান পাশ হয়ে ঘুমানো: রাসূল (সা.) ডান কাতে ঘুমাতেন এবং এটিই শিক্ষা দিতেন। ডান কাত হয়ে ঘুমালে হৃৎপিণ্ড ও পাকস্থলীর ওপর চাপ কমে, এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হ্রাস পায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে।
৭. তেল (বিশেষত জয়তুন) ব্যবহার: তিনি চুলে ও শরীরে নিয়মিত তেল, বিশেষ করে জয়তুন (অলিভ অয়েল) তেল ব্যবহারে উৎসাহ দিয়েছেন। এটি ত্বক মসৃণ রাখে, চুলের পুষ্টি জোগায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
৮. বসে পানি পান করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম, ২০২৫)। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বসে পান করলে পানি ধীরে ধীরে শরীরে প্রবেশ করে, এতে কোষগুলো ভালোভাবে তা গ্রহণ করতে পারে এবং কিডনি ও পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
৯. হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা: নবীজি (সা.) হাঁচির সময় হাত বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন এবং শব্দ নিচু করতেন (আবু দাউদ, ৫০২৯)। এই অভ্যাসটি রোগ-জীবাণু ছড়ানো রোধ করে, যার গুরুত্ব করোনা মহামারির সময় বিশ্ববাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।
১০. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: নির্দিষ্ট সময় পর পর নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা ইসলামের 'ফিতরাত' বা স্বভাবজাত পরিচ্ছন্নতার অংশ। এই অভ্যাসগুলো ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করে এবং ত্বক ও চোখকে সুস্থ রাখে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন