সৌদি আরবে গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যালকোহল বা মদ নিষিদ্ধ থাকলেও রাজধানী রিয়াদের কূটনৈতিক পাড়ায় অবস্থিত একটি নাম-পরিচয়হীন দোকানের সামনে এখন দৃশ্যপট ভিন্ন। সেখানে চুপিসারে হুইস্কি আর শ্যাম্পেন বিক্রি হচ্ছে, আর তা কিনতে দোকানের বাইরে দেখা যাচ্ছে দামী গাড়ির লম্বা লাইন।
ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারের ভেতরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকা সাধারণ একটি ভবনে এই দোকান। বাইরে শুধু একটি রহস্যময় সাইনবোর্ড, যাতে লেখা— "শুধুমাত্র কূটনীতিকদের জন্য ভ্যাটমুক্ত পণ্য।" একের পর এক দামী এসইউভি গাড়ি লোহার গেটের সামনে আসছে এবং নিরাপত্তারক্ষীরা চালকের পরিচয়পত্র দেখে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস পাঁচজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, এই দোকানটি আগে শুধু কূটনীতিকদের জন্য ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে অ-মুসলিম বিদেশিদেরও মদ কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে শর্ত হলো, তাদের কাছে দামী 'প্রিমিয়াম রেসিডেন্সি' বা বিশেষ বসবাসের অনুমতি থাকতে হবে। সাধারণত সরকারের হয়ে কাজ করা ধনী বা উচ্চশিক্ষিত বিদেশিরাই এই বিশেষ মর্যাদা পান।
বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর হওয়ায় ক্রেতারা নাম প্রকাশ করতে চাননি, কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন, নাম জানাজানি হলে হয়তো তাদের এই নতুন পাওয়া সুযোগটি বন্ধ হয়ে যাবে।
দোকানে ঢোকার নিয়ম শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন দামও ঠিক করা হয়েছে। কূটনীতিকরা এক দামে কিনছেন, আর প্রিমিয়াম রেসিডেন্সিধারীরা কিনছেন আরও বেশি দামে। দেখা গেছে, সাধারণ মানের এক বোতল সাদা ওয়াইনের দাম পড়ছে প্রায় ৮৫ ডলার, যা আমেরিকার দামের চেয়ে পাঁচগুণেরও বেশি।
দোকানটি কার মালিকানায় তা স্পষ্ট নয়, তবে এর পরিচালনার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সরকারের হাত আছে। ক্রেতাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মদ কেনার নির্দিষ্ট কোটা বা সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দোকানে ঢোকার জন্য কূটনীতিকরা যে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন, সেটি তৈরি করেছে দেশটির কর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এই গোপনীয়তা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশ বদলানোর কৌশলের সঙ্গে মিলে যায়। টিউল্যান ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু লেবার বলেন, "সৌদি কর্তৃপক্ষ এভাবেই সামাজিক নীতিগুলো পরিবর্তন করে। বড় ঘোষণা ছাড়াই তারা তলে তলে ছোট ছোট পরিবর্তন আনে। এতে সুবিধা হলো, পরিস্থিতি বুঝলে তারা আবার নীতিটি বন্ধ বা বাতিল করার সুযোগ পায়।"
সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিব গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "এখনও কিছুই বদলায়নি। ভবিষ্যতে কী হয় দেখা যাক।"
মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়ার পেছনে সৌদি কর্তৃপক্ষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ রয়েছে। দেশটির সামাজিক জীবন 'নিরস'—এমন দুর্নাম থাকায় উচ্চশিক্ষিত বিদেশিরা সেখানে কাজ করতে আসতে চান না। এছাড়া ২০৩৪ সালে সৌদি আরব পুরুষদের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করবে এবং পর্যটন বৃদ্ধি যুবরাজের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মূল অংশ।
বিশেষজ্ঞ মিস্টার লেবার বলেন, "প্রতিবেশী দেশ দুবাই ওদিকে মদ বিক্রি এবং এর কর থেকে প্রচুর টাকা আয় করে। সৌদি সরকার নিশ্চয়ই সেটা খেয়াল করেছে।" তেল সম্পদের মালিক হলেও সৌদি আরব এখন বাজেট ঘাটতির মুখে আছে। এই নতুন পদক্ষেপ স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া এড়াতে খুব সাবধানে নেওয়া হচ্ছে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন