ইসমাঈল আযহার
প্রকাশ : শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, লুটপাটের মাশুল গুনছে ব্যাংক খাত

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, লুটপাটের মাশুল গুনছে ব্যাংক খাত

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। তাদের আর্থিক খাতে লুটপাটের মাশুল গুনছে ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেকটা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে এ খাতের মূলধন ঘাটতিও। 
চলতি বছরের জুন শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের ২৪টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে ২৩ ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নতুন করে এনআরবিসি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ঘাটতিতে পড়েছে। এ সময় বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, গত বছরের ডিসেম্বরেও এনআরবিসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এখন তা সাড়ে ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতে বড় অঙ্কের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। প্রকৃত চিত্র বের করার পর উত্তরণের চেষ্টা করা হবে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত সরকারের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণের নামে বের করে নেওয়া হয়। এসব ঋণ তখন খেলাপি হলেও খেলাপি দেখানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর লুকানো খেলাপি সামনে নিয়ে আসে। এতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের অঙ্ক বাড়ছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের অঙ্ক প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর বিপরীতে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে মূলধন হারিয়ে ফেলছে এসব ব্যাংক, যা দেশের পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) কমে দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৪৭ শতাংশ-যা আন্তর্জাতিক কাঠামো অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকা উচিত। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে সিআরএআর ছিল ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ। সিআরএআর হচ্ছে একটি ব্যাংকের মূলধন ও তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত-যেখানে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সম্পদের হিসাব নির্ধারণ করা হয়। জুন শেষে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, আটটি ইসলামি ধারার ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক ঘাটতিতে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংকের। জুন শেষে এই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংকের সাত হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের চার হাজার ১৭৩ কোটি এবং লুটপাটের শিকার বেসিক ব্যাংক তিন হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, একসময় অনেক ভালো ছিল বেসিক ব্যাংক। মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এখন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, বেসিক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। কারণ ব্যাংকটির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এভাবে দীর্ঘদিন লোকসান আর ধুঁকে ধুঁকে চলার চেয়ে বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
এদিকে বেসরকারি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি ন্যাশনাল ব্যাংকের। জুন শেষে ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এরপর এবি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এছাড়া লুটপাটের শিকার পদ্মা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পাঁচ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এর বাইরে আইএফআইসি ব্যাংক চার হাজার ৫১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এক হাজার ৮৭৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক এক হাজার ৬৪০ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এক হাজার ৩৮৫ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংক ৩১৬ কোটি, সিটিজেন ব্যাংক ৮৬ কোটি ও সীমান্ত ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে।
শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকে। জুন শেষে এই ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। এই ব্যাংকের ঘাটতি ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। 
এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি পাঁচ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দুই হাজার ৭৯ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এক হাজার ৯৭৫ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ৯০১ কোটি এবং আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ২৫৪ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি কৃষি ব্যাংকের। শুধু বিশেষায়িত নয়, পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিও এই ব্যাংকের। তথ্যানুযায়ী জুন শেষে কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাবুগঞ্জে ইউপি সদস্যের ছেলেকে ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা

1

মাহফিলে বয়ানরত অবস্থায় স্ট্রোক করে প্রাণ হারালেন বক্তা

2

বিএনপি নেতাকর্মীদের পদত্যাগে হিড়িক: অস্থিরতা বাড়ছে দলে

3

ভৈরবকে জেলা করার ‘পুরানো টোপ’ দিলেন শরীফুল আলম, প্রয়াত নেতাদ

4

মুমিনুল ভেবেছিলেন আজ মুশফিকের রিটায়ারমেন্ট

5

নাশকতার অভিযোগে দিনাজপুরে ৫৯ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ৮৬ জন গ

6

ধর্ম অবমাননা, আবুল সরকারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি আলেম সমাজের

7

পটুয়াখালীতে বিএনপির অফিস ভাঙচুর মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

8

ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে

9

ডেঙ্গুতে আরো ৮ জনের মৃত্যু, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৯০ হাজার

10

বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ, যা বললেন ডাকসু নেত্রী রাফিয়া

11

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, লুটপাটের মাশুল গুনছে ব্যাংক খ

12

গভীর রাতে নির্বাচন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, পুড়েছে নথিপত্র

13

যে কারণে এইচএসসি পাসের ধস

14

আবারও আফগানিস্তানে হামলা চালাতে পারে পাকিস্তান

15

রিকশাচালকদের জন্য শায়খ আহমাদুল্লাহর নতুন উদ্যোগ

16

দল ঐক্যবদ্ধ না থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করতে পারে : তা

17

আত্মগোপনে সভাপতি, স্থবির পড়ে আছে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স

18

টেকনাফে ৩ মানবপাচারকারী আটক, উদ্ধার নারী-শিশুসহ ৭ জন

19

প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ বিচারক চেয়েছেন সিইসি

20
সর্বশেষ সব খবর