ঝিনাইদহের সর্বত্রই চলছে রমরমা সুদের কারবার। অর্থনৈতিক চাপ, বেকারত্ব, ব্যবসায় লোকসান, আর সহজে ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার সুযোগে অবৈধ সুদের কারবারিরা এখন জেলাজুড়ে যেন নতুন এক আধিপত্য গড়ে তুলেছে।
সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছেন তারা। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অমানবিক সুদের ফাঁদ, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সুদের টাকার এ বাজার এখন আর আগের মতো গোপন নেই। জনসমক্ষে, চায়ের দোকানে বসেই প্রকাশ্যেই স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে দেওয়া হচ্ছে সুদ।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টাকা হাতে পাওয়ার লোভে মানুষ অনায়াসে এসব ঋণ নেন অনেকে। তবে সুদ পরিশোধে গড়মিল হলেই শুরু হয় হুমকি-ধমকি, সামাজিক অপমান আবার কখনো কখনো তা গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
ভুক্তভোগীরা জানান, সুদি কারবারিরা ঋণ দান করে মাসিক শতকরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করে। এরা ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
ঋণ দেওয়ার সময় তারা ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে স্বাক্ষর করে নেয়। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নিয়ে থাকে।
টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্ল্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছেমত টাকার অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে অতিরিক্তি টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
কোনো কোনো কারবারিরা আদালতে মামলা পর্যন্ত ঠুকে দেয় ঋণ গ্রহীতার নামে। কারবারিরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শৈলকুপার হরিহরা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, ইব্রাহিমপুর গ্রামের আমজাদ মোল্লা, রবিউল ইসলাম, রাসেল হোসেন, ভাটই বাজারের টিটু মোল্লা, চাঁদপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন, আনারুল ইসলাম, রাজু হোসেন, শেখপাড়া এলাকার সিদ্দিক শেখ, সাঈদুর রহমান, কোরবান আলী, সারুটিয় এলাকার সুদে কানাই ও রবিউল ইসলাম, সাধুহাটি গ্রামের আব্দুল মান্নান মেম্বার, সদর উপজেলার পাগলাকানাই এলাকার গৌতম কুমার ঘোষ, কুলবাড়িয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন, কালীগঞ্জের বড় তালিয়ান গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম, কোটচাঁদপুর উপজেলার ফাজেলপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম, তালসার গ্রামের আলতাফ হোসেন, সাবদারপুর গ্রামের নাজির উদ্দিনসহ দেড় শতাধিক সুদি মহাজন গোটা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন