বর্তমান সময়ে ঘাড়ব্যথা একটি খুব পরিচিত সমস্যা। অফিসে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুঠোফোন ব্যবহার করা বা হঠাৎ কোনো আঘাত—এগুলোই ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টির প্রধান কারণ। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যথা শুধু ঘাড়েই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং কাঁধ হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কখনো ব্যথা না হয়ে ঝিনঝিন করে বা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অন্য রকম অনুভূতি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সমস্যাকে সারভাইক্যাল রেডিকুলোপ্যাথি বলা হয়। এর মূল কারণ হলো ঘাড়ের হাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন থেকে বেরিয়ে আসা স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হওয়া।
কেন হয় ও উপসর্গ:
এই সমস্যা হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রধানত ডিস্ক প্রোলাপ্স বা হার্নিয়েশন অর্থাৎ হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক ফুলে গিয়ে বা ছিঁড়ে স্নায়ুতে চাপ দিলে এই ব্যথা হয়। দ্বিতীয়ত, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ধারালো গজানো অংশ বা হাড়ের স্পার (অস্টিওফাইট) স্নায়ুকে চেপে ধরে। আঘাতজনিত পরিবর্তন এবং দীর্ঘ সময় ধরে নিচু হয়ে মুঠোফোন দেখা বা একটানা ডেস্কে বসে থাকার মতো খারাপ ভঙ্গিও এর জন্য দায়ী।
এ ব্যথার অন্যতম উপসর্গ হলো ঘাড় থেকে কাঁধ হয়ে হাত ও আঙুল পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া। ঝিনঝিনে অনুভূতি, অবশ ভাব হওয়া, হাত বা বাহু দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং ঘাড় নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া এর সাধারণ লক্ষণ। কখনো কখনো হাতের গ্রিপও দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়:
সারভাইক্যাল রেডিকুলোপ্যাথির চিকিৎসায় সম্পূর্ণ বিশ্রামের দরকার নেই। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাথমিক উপশমের জন্য গরম বা ঠান্ডা সেঁক নেওয়া যেতে পারে।
ব্যথা তীব্র হলে অস্থায়ীভাবে সারভাইক্যাল কলার ব্যবহার করা যেতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে টেনস (ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন) এবং আইএফটি (ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি) ব্যথা কমাতে কার্যকর। থেরাপিউটিক আলট্রাসাউন্ড প্রদাহ ও পেশির সংকোচন কমাতে সহায়ক। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ও মাংসপেশি শিথিলকারী ওষুধ খেতে হতে পারে। ব্যথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ফিরিয়ে আনতে মোশন এক্সারসাইজ এবং মাংসপেশি শক্তিশালী করতে আইসোমেট্রিক নেক এক্সারসাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রতিরোধে করণীয়:
১. মুঠোফোন বা ট্যাব ব্যবহারের সময় মাথা নিচু না করে তা চোখের সমান উচ্চতায় ধরুন। ২. কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান্তরালে রাখুন এবং চেয়ারের উচ্চতা ঠিক করুন। ৩. উঁচু বালিশে না শুয়ে মাঝারি উচ্চতার শক্ত বালিশ ব্যবহার করুন। ৪. মাথায় ভারী জিনিস বহন করা এড়িয়ে চলুন। ৫. এক হাতে ভারী জিনিস না নিয়ে দুই হাতে ভাগ করে তুলুন। ৬. আধা ঘণ্টা পরপর কাজের বিরতি নিয়ে একটু দাঁড়িয়ে হাঁটুন। ৭. গাড়ি চালানোর সময় লম্বা সফরে ঘাড়ের জন্য ছোট কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন