কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে টাকার অভাবে শিকলবন্দী জীবন কাটানো ১৪ বছর বয়সী শান্তর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল ইসলাম শান্তর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা তার বাবা জসীম উদ্দীনের হাতে তুলে দেন।
জন্মের পর থেকেই শান্তর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করা হলেও অর্থ সংকটে নিয়মিত চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিন দিন অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকায় শান্তকে রাতে ঘরে এবং দিনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন অভিভাবকরা।
এর আগে রবিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন শান্তর বাড়িতে গিয়ে শিশুটির অবস্থা দেখেন এবং তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।
ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম টাকা তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার পীযূষ কুমার, সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী এবং মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদি।
শান্তর পিতা জসিম উদ্দিন জানান, শান্ত ২০১১ সালে জন্ম নেওয়ার পর সাড়ে তিন বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিক আচরণ ও অখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে পাঁচ বছর চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে দৈনিক ১০০–২০০ টাকার ওষুধ খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি, ফলে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়।
জসিম আরও জানান, করোনাকালে শান্তর ভিডিও ভাইরাল হলে সে সময়ের পুলিশ সুপার তানভির আরাফাত চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেও পরে তিনি বদলি হলে চিকিৎসা থেমে যায়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা (তিন মাস পরপর ২,৬০০ টাকা) খাবার ও পরিচর্যায় শেষ হয়ে যায়। তিনি ডিসি ও ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
মিরপুরের ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, "শান্তর এই করুণ অবস্থা জেলা প্রশাসকের নজরে আসার পর তিনি নিজে খোঁজ নেন। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ১৫,০০০ টাকা প্রদান করেছি। সরকারি সকল সহযোগিতা থেকে শান্তর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে।"
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন