মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র সম্পাদনার জেরে ব্রিটিশ প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবিসি’র মহাপরিচালক টিম ডেভি ও সংবাদ বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেবোরাহ টার্নেস পদত্যাগ করেছেন।
ওই তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সাংবাদিকদের কাজ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। খবর এএফপির।
পদত্যাগের বিষয়ে এক বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘তথ্যচিত্রটিতে কিছু ভুল হয়েছে। মহাপরিচালক হিসেবে এর দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে।’
২০২৪ সালে মার্কিন নির্বাচনের আগে ২৮ অক্টোবর তথ্যচিত্রভিত্তিক ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়। এটি তৈরিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে পক্ষপাতিত্ব করেছেন। ডকুমেন্টারির শেষ দিকের একটি পর্বে ট্রাম্পের ভাষণকে এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে জনমনে। এ নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষোভ দেখিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাঁর প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, বিবিসি একটি ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিবিসির একটি অভ্যন্তরীণ মেমো ফাঁস হয় যুক্তরাজ্যের আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রামের প্রতিবেদনে। বিবিসির কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো সেই বার্তায় বলা হয়, ‘বিবিসি তাদের ‘প্যানোরামা’ তথ্যচিত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তব্য সম্পাদনা করে করেছিল। সেখানে ট্রাম্পের বক্তব্যের দুটি অংশ এমনভাবে জোড়া লাগানো হয়েছে যাতে মনে হয়, তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলায় তাঁর সমর্থককে উসকে দিয়েছেন। ওই বক্তব্যের সম্পাদনার পর ট্রাম্পের বক্তব্য এমন দাঁড়ায় যে তিনি বলছেন, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে যাচ্ছি। আমি সেখানে আপনাদের সঙ্গে থাকব। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব।’
মেমোটিতে বলা হয়, ট্রাম্পের ভাষণে এ কথাগুলো থাকলেও সেগুলোর মধ্যে আরও অনেক কথা ছিল। মূলত টেলিগ্রামের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই টিম ডেভি ও ডেবোরাহ টারনেস ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েন। ফাঁস হওয়া মেমোটি যিনি লিখেছিলেন বিবিসির সম্পাদকীয় মানদণ্ড বজায় কমিটির উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট- তিনি গত জুনে পদত্যাগ করেন।‘ট্রাম্প: আ সেকেন্ড চান্স?’ নামের তথ্যচিত্রের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রেসকট। গত বছর ওই তথ্যচিত্রটি বিবিসিতে প্রচারিত হয়। বিবিসির জন্য এটি নির্মাণ করেছিল অক্টোবর ফিল্মস লিমিটেড নামের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
বিবিসিকে নিয়ে বিতর্কের এ ঘটনায় রোববার যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও গণমাধ্যম মন্ত্রী লিসা নন্দী বলেন, প্যানোরামা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি ‘বেশ গুরুতর’। বিবিসির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে 'বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে 'সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, ওই সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক পক্ষপাতের নজির দেখা যায়।
মন্তব্য করুন