মানুষের জীবনে রিজিক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিজিক শুধু উপার্জনের মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে, নাকি ভাগ্যই সবকিছু ঠিক করে দেয়—এ নিয়ে নানা মত থাকলেও ইসলাম আমাদের রিজিক সম্পর্কে এমন পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি শিখিয়েছে, যা একই সঙ্গে ঈমান, আমল, নীতি-নৈতিকতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্বকে সমান গুরুত্ব দেয়।
নজরত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদিসে রিজিক সম্পর্কে এমন সব নির্দেশনা এসেছে, যা মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে, আশা বৃদ্ধি করে এবং সৎপথে উপার্জনে শক্তি জোগায়। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রিজিক পাওয়ার বিষয়ে অধৈর্য ও অস্থির হয়ো না। কোনো বান্দা তার নির্ধারিত রিজিক সম্পূর্ণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। তাই আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনে সংযমী ও সৎপথ অবলম্বন করো। হালালটুকু গ্রহণ করো আর হারাম থেকে বেঁচে থাকো।" (ইবনে মাজাহ: ২১৪৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা (মাতৃ) গর্ভে একজন ফেরেশতা নিয়োগ করেন। সে বলে, হে শুক্রবিন্দুর প্রতিপালক, হে জমাট রক্তের প্রতিপালক, হে মাংসপিণ্ডের রব! এরপর আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তিনি ভ্রূণের অবস্থা নির্ধারণ করে দেন, এটি কি পুরুষ হবে, না নারী? এটি সৌভাগ্যবান হবে, না হতভাগ্য? এর রিজিক কত হবে? এর আয়ু কত হবে? এসবই মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় লিপিবদ্ধ করা হয়। (সহিহ বোখারি: ৬৫৯৫) আরেকটি হাদিসে এসেছে, "নিশ্চয়ই রিজিক মানুষকে খুঁজে বের করে, এমনকি তার নিজের জীবনের ললাটলিখন থেকেও দ্রুত।" (মুসনাদে ইবনে হিব্বান: ৩২৩৮)
রিজিক বৃদ্ধির আধ্যাত্মিক রহস্য:
রিজিক মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেক মানুষই চায় তার জীবনে প্রশস্ত রিজিক, স্বস্তি, বরকত ও শান্তি। কেউ কঠোর পরিশ্রম করে, কেউ পরিকল্পনা করে, আবার কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে। কিন্তু রিজিক বৃদ্ধির কিছু আধ্যাত্মিক রহস্য রয়েছে, যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
সহিহ হাদিসে নবী কারিম (সা.) দুটি আমলের মধ্যে এমন এক আশ্চর্য শক্তি তুলে ধরেছেন, যা মানুষের রিজিককে বিস্তৃত করে, জীবনকে দীর্ঘ ও বরকতময় করে এবং পরিবার-সমাজের সম্পর্ককে গভীর করে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রসারতা এবং আয়ু বৃদ্ধির আশা করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে বজায় রাখে।" (সহিহ বোখারি: ৫৯৫৬)
আরেক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু ও রিজিকের বৃদ্ধি কামনা করে, সে যেন তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।" (সহিহ মুসলিম: ২৫৫৭)
পরিশ্রম ও হালাল উপার্জনের গুরুত্ব:
নবী কারিম (সা.) মুসলমানদের রিজিকের অন্বেষণ ও উপার্জনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। বহু সহিহ হাদিসে পরিশ্রম, চেষ্টা এবং হালাল জীবিকার প্রশংসা করা হয়েছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ কাঠ সংগ্রহ করে নিজের পিঠে বহন করে বিক্রি করা—এটাই উত্তম, অন্যথায় মানুষের কাছে হাত পেতে চাওয়া, তারা দিক বা না দিক—তা সম্মানের নয়।" (সহিহ বোখারি: ২৩৭৪) তিনি আরও বলেছেন, "মানুষ নিজের হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাবার কখনও খায়নি। আর আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন।" (সহিহ বোখারি: ২০৭২)
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন