আশি-নব্বইয়ের দশকে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ বেশ জমজমাট থাকলেও সময়ের বিবর্তনে সেই প্রতিযোগিতায় ভাটা পড়েছিল। তিন বছর পর বাফুফের নতুন কমিটি এই আসর আবার মাঠে গড়িয়েছে, যার ফাইনাল আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। শিরোপার জন্য লড়বে সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুর। এই উপলক্ষ্যে আজ বাফুফে ভবনে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল দলের কোচ মাহবুব আলম পিয়ার বলেন, "সিরাজগঞ্জ জেলার জন্ম ৩৯ (মূলত ৪১) বছর। এই সময়ের মধ্যে আমরা কখনো জেলা চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল খেলিনি। এবারই প্রথম ফাইনালে উঠেছি, আশা করি চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।" অন্যদিকে, দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও কোচ শামীম আহমেদ জানান, "আমাদের জেলার ইতিহাস ৪০০ বছরের পুরনো। এরপরেও বাফুফে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপের আমরাও কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তাই দিনাজপুরের ফুটবলপ্রেমীদের আগামীকাল শিরোপা উপহার দিতে চাই।"
সিরাজগঞ্জের চেয়ে দিনাজপুরের অধিনায়ক মাসুদ রানা নিজেদের খানিকটা এগিয়ে রাখলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, "আমাদের কয়েকজন ফুটবলার প্রথম বিভাগে খেলছে। তারা টার্ফে অনুশীলন করছে। খেলাও কমলাপুর স্টেডিয়ামে টার্ফে হবে। এই দিক থেকে আমরা হয়তো তাদের দিক থেকে এগিয়ে।" সিরাজগঞ্জের অধিনায়ক মিলন কাশেম প্রতিপক্ষ অধিনায়কের এমন আত্মবিশ্বাসে অবশ্য ভীত হননি, "আমরা নিজেদের প্রমাণ করে ফাইনালে উঠেছি। আশা করি ফাইনালে সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সিরাজগঞ্জ ফিরব।"
জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল ভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিল, যেখানে এএফসি সভাপতিকে প্রধান অতিথি করার পরিকল্পনা ছিল ফেডারেশনের। দুটির একটিও না হওয়ার কারণ সম্পর্কে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপি বলেন, "এএফসি সভাপতি একান্তই ব্যক্তিগত কারণে আসেননি বলে আমরা জানতে পেরেছি। জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর আবার নারী দলের ত্রিদেশীয় সিরিজ। ঐ ভেন্যু অনেক ব্যস্ত থাকায় কমলাপুরেই আয়োজন করছি।"
কমলাপুর ভেন্যুতে ফাইনাল হওয়ার ফলে ছন্দপতন হলেও দিনাজপুরের কোচ শামীম এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, "এতে আমরা কয়েক দিন প্রস্তুতির সময় পেয়েছি। আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে।" জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ উপলক্ষ্যে সিরাজগঞ্জ বড় পর্দায় খেলা দেখাবে। ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে হলেও দিনাজপুর থেকে আগামীকাল দুই বাস ভর্তি সমর্থক আসবে। চ্যাম্পিয়ন দল ৫ লাখ ও রানার্স আপ দল ৩ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার পাবে।
জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ থেকে বাফুফের প্রাপ্তি সম্পর্কে কমিটির চেয়ারম্যান হ্যাপি বলেন, "কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে আমরা বাফুফের কোচ দিয়ে ৪৩ জন মেধাবী খেলোয়াড় বাছাই করেছি। যাদের বাফুফের এলিট একাডেমীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তৃণমূলের ফুটবল জেগে উঠেছে। সামনে অ-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ করব।"
টুর্নামেন্টের প্রথম দুই পর্ব হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে এবং নক আউট পর্ব নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হওয়ায় এবারের আসর বিগত আসরগুলোর চেয়ে খানিকটা ভালো হয়েছে বলে মত দেন সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন, "এবারের খেলার মান ও আয়োজন অন্য বারের চেয়ে ভালো হয়েছে। ফেডারেশনের সহযোগিতার পরিমাণও বেশি ছিল। যদিও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।"
তবে অনেক জেলায় স্টেডিয়াম খেলা আয়োজনের উপযোগী না থাকায় তৃতীয় ভেন্যুতে খেলা আয়োজন করতে হয়েছে এবং খোলা মাঠে খেলা হওয়ায় রেফারি লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন