গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরু চুরির চেষ্টার অভিযোগে মো. আবদুস সালাম মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে কয়েক দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত আড়াইটার দিকে মো. আবদুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে ঢোকেন আবদুস সালাম মিয়া। বিষয়টি টের পান গণির স্ত্রী দুলালি বেগম। তিনি চিৎকার দিলে স্বামী ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে সালাম মিয়াকে ধরে ফেলেন। এরপর তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় সালাম মিয়াকে প্রথমে পুকুরে বেঁধে রাখা হয়। ভোরের দিকে তাঁকে পুকুর থেকে তুলে আবারও মারধর করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত আবদুস সালাম মিয়া পাশের রামডাকুয়া গ্রামের মো. ওমেদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় আজ শনিবার বেলা ১টার দিকে পুলিশ বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের মো. আবদুল গণি মিয়ার স্ত্রী মোছা. দুলালি বেগম (৪৩)-কে আটক করে।
আবদুল গণি মিয়া বলেন, ‘আমার একটি শ্যালো মেশিন হারিয়েছে কয়েক দিন আগে। সেই থেকে টেনশনে আছি। রাতে গোয়ালঘরে ঢুকে দেখি সালাম মিয়া গরুর দড়ি ধরে আছেন। পরে খবর দিলে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ছুটে আসেন। মারধর তাঁরাই করেছেন।’
আটকের আগে দুলালি বেগম বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে শ্যালো মেশিন হারাইছে। হামার দুইটা মানুষের খাওয়াদাওয়া, ঘুম নাই। রাইতে গোয়ালঘরে শব্দ শুনে স্বামীকে তুলে পাঠাই। পরে মুই আশপাশের লোকজন ও শরিকদের খবর দেই। ওমরাগুলো আসিয়ে কিল-ঘুষি দেয়। যেই আসছে তাই একটা করি মাইরছে। লোকটা সকালে ঠান্ডায় কাপতে কাপতে মরি গেইছে।’
নিহতের স্বজনদের দাবি, সালাম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন, কখনো হাটবাজারে ভিক্ষাও করতেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে।
খবর পেয়ে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাকিম আজাদ এবং বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুলালি বেগম নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
সকালবেলা/এস
মন্তব্য করুন