বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবলমাত্র ‘এক্সপেরিমেন্ট আর এক্সপেরিয়েন্স’ অর্জনের নির্বাচন নয়। অতীতের চেয়ে এবারের নির্বাচন জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন-সাধ-আশা-আকাঙ্ক্ষা- স্বার্থ এবং সম্ভাবনা। আছে বাংলাদেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখার প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। ভোটের মাঠে জনগণের সঙ্গে থাকবো।’’
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত হন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘১৯৭১, ২০২৪, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ও ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে— জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনতার বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’’
‘‘আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে-গঞ্জে শহরে-নগরে, পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে ও রাজপথে জনগণের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই নির্বাচনি মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী দশকটি হবে রূপান্তরের দশক। এই চিন্তা নিয়েই আমরা আমাদের দেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি।’’
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটির বেশি তরুণ, কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক, কর্মক্ষম এই জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে, বাংলাদেশের বিজয়কে সুসংহত করাই বিএনপির লক্ষ্য। একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমেই আমার আমাদের আগামীর প্রতিটি বিজয় দিবসকে আরও গৌরবান্বিত এবং আরও অর্থবহ করে তুলতে চাই।’’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন আমাদের মহান বিজয় দিবস। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, কখনই এই দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য মলিন হবে না।’’
‘‘তবে একটি বিষয় আমাদের সবার স্মরণে রাখা দরকার, সতর্ক থাকা দরকার— সেটি হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি অপশক্তি অতীতের মতো এখনও সক্রিয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের রঙ-রূপ- চেহারা হয়তো পাল্টেছে, চরিত্র কিন্তু পাল্টায়নি।’’
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ হঠাৎ করেই সাগরের বুকে ভেসে ওঠা কোনও ভূখণ্ড নয়। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, আর অসংখ্য মা-বোনের সম্মান-সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডটির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে অসংখ্য গল্প, বই ও কবিতা রচিত হয়েছে।’’
‘‘অনেকেই হয়তো জানেন, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ রয়েছে। এই নিবন্ধটি আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।’’
তিন অভিযোগ করেন, পতিত পলাতক একটি চক্র স্রেফ নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছে।
স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয় ইতিহাসে পরিণত করার অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার কারণেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত একটি চক্র বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘‘পরাজিত চক্রকে মোকাবিলায় প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার পরিবর্তে বিজয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর সমৃদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক— এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।’’
‘‘বিএনপি মনে করে, যতদিন পর্যন্ত এই রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে না, ততদিন পর্যন্ত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে না।’’
তিনি মনে করেন, জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্ব শর্তই হচ্ছে, জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা। এ কারণেই বিএনপি সব সময় রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই যেকোনও মূল্যে দেশে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
তিন আরও বলেন, ‘‘দেশের জনগণ সাক্ষী, অকারণ শর্তের পর শর্ত জুড়ে দিয়ে কিংবা নানা অজুহাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একাধিক চক্র নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বারবার নানা রকম বিঘ্ন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’’
‘‘তবে সব বাধা উপেক্ষা করে প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় পর নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত জনগণের সেই কাঙ্ক্ষিত সেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছে।’’
‘‘তবে ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু এখনও থেমে নেই। গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে গুলি করা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।’’
তিনি প্রশ্ন রারেখে বলেন, ‘‘কী ছিল ওসমান হাদির অপরাধ? আমি মনে করি, কয়েকটি প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে ঘাতকদের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমানণ করা গেলে কারা খুশি হবে? নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বহাল রাখা গেলে কারা লাভবান হবে? দেশে জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের লাভ? আমি বিশ্বাস করি, এসব প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই হাদির ঘাতকেরা লুকিয়ে রয়েছে।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘মহান বিজয়ের সুফল প্রতিটি নাগরিকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আবারও জনগণের সহযোগিতা সমর্থন এবং সুযোগ প্রত্যাশা করছে।’’
মন্তব্য করুন