২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে আবারও প্রমাণিত হলো : শিক্ষাগত সাফল্যে মেয়েরা ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে। পাসের হার হোক কিংবা জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা, উভয় ক্ষেত্রেই ছাত্রদের পেছনে ফেলেছে ছাত্রীরা। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রার শক্ত প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বছর মোট ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ছাত্রী ছিলেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন, অর্থাৎ পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ৬ লাখ ১১ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন, যার হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। সেই হিসেবে পাসের হারে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ জন, আর ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন। অর্থাৎ ছেলেদের তুলনায় ৪ হাজার ৯৯১ জন বেশি ছাত্রী সর্বোচ্চ গ্রেড পয়েন্ট অর্জন করেছে। গত বছরও একই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, ২০২৪ সালে ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮০ হাজার ৯৩৩ জন, আর ছাত্রদের ক্ষেত্রে সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন। এ ধারাবাহিকতা নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালেও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছিল। সেবার ছাত্রীদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন এবং ছাত্রদের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৩০ জন পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্জন করেছিল। অর্থাৎ তখনও ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ১৩৫ জন বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো ফল করছে, যা শিক্ষাব্যবস্থার সামাজিক পরিবর্তনের একটি ইতিবাচক প্রতিফলন।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, মেয়েদের এ অগ্রগতি কেবল শিক্ষাগত অর্জন নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের দিকনির্দেশও বটে। পরিবারের আগ্রহ, অভিভাবকদের সচেতনতা, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার, সব মিলিয়ে মেয়েরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক। তবে সামগ্রিকভাবে এ বছর ফল আশানুরূপ নয়। এবারের গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। করোনা-পরবর্তী পূর্ণমান ও পূর্ণ সিলেবাসে ফেরার কারণে অনেক শিক্ষার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, যা ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে।
তবুও তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিক্ষাব্যবস্থার সংকটের মাঝেও মেয়েরা নিজেদের প্রস্তুতি ও মানসিক দৃঢ়তায় সাফল্যের ধারায় টিকে আছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ছাত্রীদের ফলাফল দেখাচ্ছে, তারা শুধু মনোযোগীই নয়, বরং কঠিন প্রতিযোগিতায়ও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম।’
সবশেষে বলা যায়, এইচএসসি ফলাফলের মাধ্যমে মেয়েরা আবারও প্রমাণ করল, সীমাবদ্ধতা যতই থাকুক না কেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের জোরে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। এটি কেবল শিক্ষাক্ষেত্রের নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতিরও এক অনুপ্রেরণার প্রতিচ্ছবি।
সকালবেলা/এমএইচ
মন্তব্য করুন