ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবি পূরণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এই সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না হলে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু না হলে স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো হবে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে সাদিক কায়েম এই আল্টিমেটাম ও তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এ সময় তার পাশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি মূল দাবি উত্থাপন করে সাদিক কায়েম বলেন, “আমাদের ভাই ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারী সব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রের সব সংশ্লিষ্ট অর্গানকে দ্রুত জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং যাদের গাফিলতি প্রমাণিত হবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে যারা এই হামলাকে সমর্থন যুগিয়েছে, হাদি ভাই ও জুলাই বিপ্লবীদের হত্যাযোগ্য করে তুলেছে, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টদের সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করতে হবে। এসব ব্যবস্থা অবিলম্বে দৃশ্যমান করতে হবে।”
দ্বিতীয় দাবিতে তিনি বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে হবে এবং সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের অবহেলা আর সহ্য করা হবে না।”
শেষ দাবিতে তিনি বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ও অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করতে হবে। গণহত্যাকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার প্রতিবাদে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অভিযুক্তদের ফেরত না দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যাবে না।”
উপদেষ্টাদের পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়ে সাদিক কায়েম স্পষ্টভাবে বলেন, “যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবির দৃশ্যমান উন্নতি না হয়, তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমসহ আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।”
তিনি জানান, তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকর না হলে জুলাইয়ের চেয়েও শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং জুলাইয়ের বিপ্লবকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে লড়াই অব্যাহত থাকবে।
সাদিক কায়েম জাতীয় ঐক্য ও গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থী ও ইসলামী সংগঠনসহ সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঐক্যের ডাক দেন। তিনি প্রতিটি পাড়া ও ওয়ার্ডে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘গণকমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কমিটিকে সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) তীব্র নিন্দা জানান সাদিক কায়েম। তিনি সিইসিকে দ্রুত বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি যেসব আইনজীবী টাকার বিনিময়ে ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের’ মামলা প্রত্যাহার বা জামিনের জন্য কাজ করছেন, তাদের হুঁশিয়ার করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর পুরানা পল্টনে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। সবশেষ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন