রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার বন্ধু জরেজুল ইসলাম এবং জরেজুলের প্রেমিকা শামীমা আক্তারের পাতা ত্রিভুজ প্রেমের ফাঁদে পড়েছিলেন। এর ভয়াবহ পরিণতিতে ঢাকায় তার মরদেহ ২৬টি খণ্ডে বিভক্ত অবস্থায় একটি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ওই দুজনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হত্যার দুই ধরনের কারণ:
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে র্যাব শামীমাকে গ্রেফতারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, প্রেমিকাকে ব্যবহার করে বন্ধু আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল জরেজ। কিন্তু টাকা না নিয়ে কেন তাকে হত্যা করা হলো, সে বিষয়ে শামীমা স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাতেই কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে জরেজুলকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এটি আসলে একটি "ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি"।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ গেটের কাছ থেকে একটি নীল ড্রামে আশরাফুলের খণ্ডবিখণ্ড (২৬ টুকরো) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
যেভাবে ঘটনাটি ঘটে:
ডিবির তদন্তে জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে তার প্রেম হয়। জরেজ দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জেনে ফেলেন। স্ত্রী তখন জরেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের (নিহত) কাছে সাহায্য চান এবং শামীমাকে তাদের জীবন থেকে সরে যেতে বলার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু আশরাফুল শামীমাকে ফোন দেওয়ার পর, একপর্যায়ে তাদের মধ্যেই নতুন করে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।
একপর্যায়ে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন যে, তারা জরেজুলকে জাপানে পাঠিয়ে দেবেন, যার জন্য উভয়ে সাত লাখ করে ১৪ লাখ টাকা খরচ করবেন। এই প্রক্রিয়ার জন্য শামীমা দুই বন্ধুকেই (জরেজুল ও আশরাফুল) ঢাকায় আসতে বলেন। বুধবার তারা সায়েদাবাদের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ডিবিপ্রধান জানান, ওই বাসায় জরেজ ও শামীমা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আশরাফুলকে অচেতন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে আশরাফুল শামীমার সান্নিধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে জরেজ বাধা দেন এবং এ নিয়ে তর্কের জেরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে আবার বাসায় ফিরলে শামীমা জানান আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছেন।
কিন্তু আশরাফুল জেগে ওঠেন। এসময় আশরাফুল শামীমাকে 'বিকৃত যৌনাচারের' জন্য জোর করতে থাকলে, শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর তিনি চিৎকার দিলে লুকিয়ে থাকা জরেজ হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে আঘাত করেন। আশরাফুল চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না গুঁজে ও স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন, যার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।
এরপর দুজন রাতভর মরদেহের সাথে ওই বাসায় থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে তারা ড্রাম কিনে এনে মরদেহটি ২৬ টুকরো করে। পরে চাল দিয়ে ঢেকে একটি সিএনজিতে করে হাইকোর্টের সামনে ড্রামটি ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন