বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও তাঁকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার বিষয়ে সংশয় কাটাতে পারছেন না চিকিৎসকরা। যদিও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবারের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতারা।
চিকিৎসা-সংক্রান্ত এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই চীন ও যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দুটি দল ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
বুধবার রাতে চীনা চিকিৎসকদের দ্বিতীয় দল হাসপাতালে পৌঁছে। চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটি রাতেই মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছুই জানায়নি।
অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ মোতায়েন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে। বিশিষ্টজন ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, ফুসফুসে স্বাভাবিকভাবে বাতাস চলাচল করানোর জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁকে কিডনি কার্যক্রম সচল রাখতে ডায়ালাইসিস করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা ৭টার পরই তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। তাঁকে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) টানা এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন। তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক নুরুদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থা অপরিবর্তিত। আগের মতোই আছেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন– না, আগের মতোই। উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই বলা যাচ্ছে না।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে গতকাল দুপুরে হাসপাতালে যান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পরে তাঁর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, উপদেষ্টা সিসিইউর ভেতরে গিয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন সাড়া দিয়েছেন। ইশারায় সালামের জবাব দিয়েছেন।
মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল। কিছুটা রেসপন্স করছেন। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা ডাক দিলে কিছুটা সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এটাকে আশানুরূপ উন্নতি বলা যাচ্ছে না। তাঁর স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করছে।
তিনি জানান, প্রতি রাতেই ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক করে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ড। যেখানে দেশি-বিদেশি অন্তত দেড় ডজন চিকিৎসক যুক্ত হন। লন্ডন ক্লিনিকের বিখ্যাত চিকিৎসকরাও যুক্ত হন, যাদের অধীনে খালেদা জিয়া লন্ডনে মাসব্যাপী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।
বৈঠকের পর নতুন করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা হয়। এভাবেই চলছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। আশানুরূপ উন্নতি না হলে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে না।
আইএ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন