কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল মধুনগর এলাকায় ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া একটি ফিশারী দখলের উদ্দেশ্যে এক পরিবারের ওপর সশস্ত্র হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটি বুধবার (১২ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মোশাররফ হোসেন রনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় ১৫৬ শতাংশ জমির ওপর তাদের এই ফিশারীতে তারা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ফিশারীটি দখলের উদ্দেশ্যে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছে।
রনির অভিযোগ, স্থানীয় মোশারফ হোসেন সবুজের প্ররোচনায় এই ভাড়াটে বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুবেল মিয়া ও তার ভাই সোহেল রানা। তাদের সহযোগী হিসেবে প্রায় ৩০-৩৫ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি ফিশারীর পাড়ে অবস্থান নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় ডাকাতি, অবৈধ দখল, মাছ চুরি, মাদক কারবার এবং বিকাশ কর্মী ওমর ফারুক অপহরণ মামলাসহ একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। রনি আক্ষেপ করে বলেন, "এত অপরাধের আসামি হয়েও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।"
সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন রনি দাবি করেন, এই রুবেল বাহিনীর পেছনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রেজাউল করিম খান চুন্নু ও তার ভাই শাহিন করিমের নাম স্থানীয়ভাবে শোনা যাচ্ছে। রনি বলেন, “আমি নিজে গুলশানে গিয়ে রেজাউল করিম খানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি তখন অস্বীকার করলেও, তার ভাই শাহিন করিম দেশে ফেরার পর থেকে হামলার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।”
রনি আরও অভিযোগ করেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শাহিন করিম এক 'উকিল দরবারে' (স্থানীয় সালিশ) তার চাচা শাহাব উদ্দীনকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করেন। পরে দরবারের রায় তাদের পক্ষে আসায়, তাদের ভাই ওমর ফারুককে অপহরণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর শাহাব উদ্দীন ও পরাশ উদ্দীন রাকিবের ওপর এই রুবেল বাহিনীর সদস্যরা প্রাণঘাতী হামলা চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার এখন সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে যে, রেজাউল করিম খান চুন্নু মনোনয়ন পেলেই ফিশারীটি বালু দিয়ে ভরাট করে আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে। আমরা প্রশাসনের কাছে আমাদের পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা চাই।”
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, "দুই পক্ষের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আগেও মারামারির ঘটনা ঘটেছে এবং মামলাও হয়েছে। কিছু আসামি জামিনে থাকলেও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। বিকাশ কর্মী অপহরণের মামলাটি তদন্তাধীন থাকায় এ বিষয়ে এখন মন্তব্য করা যাচ্ছে না।"
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন