সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রভাবে সাতক্ষীরা সীমান্তজুড়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র না থাকা বহু ভারতীয় নাগরিক সীমান্তের দিকে সমবেত হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশরাফুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতের বিশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ কার্যক্রম স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর)-কে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট থানাধীন তারালী ও হাকিমপুর সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর জেরে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নেই—এমন বহু মানুষ সীমান্তের দিকে সমবেত হচ্ছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তজুড়ে বিজিবি টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) মাধ্যমে গত ৪ নভেম্বর থেকে এসআইআর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় বিএলও-রা প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে গিয়ে জাতীয়তা ও ভোটার–যোগ্যতা যাচাই করছেন।
এসআইআর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও মুসলিম নাগরিকেরা, অন্যদিকে বিজেপি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বিশেষ করে ২০০২ সালের পর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিজিবি জানিয়েছে, এসআইআর আতঙ্কে গত ১ নভেম্বর ভারতীয় পুলিশ ৪৫ জনকে আটক করে বিএসএফের কাছে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দিলে, তারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক দাবি করেন। পরে তাদের পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য আদালতে তোলা হয়। ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের 'বাংলাদেশি' আখ্যা দিয়ে পুলিশ ও বিএসএফের হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের নথিপত্র নেই—এমন বহু মানুষ প্রতিদিন সাতক্ষীরা সীমান্তের তারালী ও হাকিমপুর এলাকায় জড়ো হচ্ছেন। খোলা জায়গায় রাতযাপন করায় শীত, খাবার ও পানির অভাবে নারী-শিশুসহ সবাই মানবিক সংকটে পড়ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে পরে তাদের মাঝে শুকনা খাবার ও পানি বিতরণ শুরু হয়।
বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আশরাফুল হক আরও জানান, ভারতের অভ্যন্তরীণ এই সমস্যার সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত টহল, বিশেষ নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আনসার–ভিডিপি সদস্য এবং স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, বিজিবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের সঙ্গে সভা-মতবিনিময় করে সচেতনতা বাড়াচ্ছে এবং সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন