দেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস শুধু একজন ব্যক্তির বিষয় নয়, এটি কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলে।
বিশাল সংখ্যক এই রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। দেশে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্যান্য সরকারি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এন্ডোক্রাইনোলজিস্টদের কোনো পদ নেই। দেশে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট আছেন মাত্র ৩৫০ জন। এর সঙ্গে বছরে ২০ থেকে ৩০ জনের মতো পাশ করে বের হওয়া চিকিৎসক যুক্ত হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২৫। এবারের প্রতিপাদ্য-‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা দিবসটি উপলক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশের (এসিইডিবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, মানবদেহে কোনো কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব বা ঘাটতি হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ পরে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।
বাংলাদেশে এন্ডোক্রাইন বা হরমোনের সবচেয়ে বড় রোগ ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। শহরাঞ্চলে এই হার ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ শতাংশ। গ্রামে এই হার এক সময় কম থাকলেও এখন সেখানেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা। এর মূলে রয়েছে শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতার অভাব।
দেশের ৯০ শতাংশের বেশি রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। শতকরা ৫ ভাগের কম রোগী টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এই রোগীদের ইনসুলিন না দিলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে। বেশিরভাগ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো প্রাণঘাতী ঝুঁকি বাড়ছে।
মন্তব্য করুন