জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মধ্যস্তাকারী হিসেবে চায় জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। দলগুলো সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোট করে সনদ বাস্তবায়নে ৬ নভেম্বর গণমিছিল করে সরকারপ্রধানকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবি পূরণ না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করবে আট দল।
সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তিতে সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মতৈক্যের জন্য দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ঐকমত্য না হলে এক সপ্তাহ পর সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, মতভেদ কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তবে এই আলোচনার জন্য একজন ‘রেফারি’র অভাব হতে পারে।
গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে ডা. তাহের আলোচনার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানান। তবে দলটি এতে এখনও সাড়া দেয়নি। জামায়াত নায়েবে আমির বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদ যদি মনে করে, আলোচনার আহ্বান জানানো ছাড়া তাদের দায়িত্ব নেই, তাহলে রেফারির অভাব হতে পারে। আমরাও চেষ্টা করব, তবে আশা করব আগের মতই প্রধান উপদেষ্টা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন।’
গত ২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশের দুটি খসড়া দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের দিনে গণভোট চায়। জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আট দল নির্বাচনের আগে গণভোট চায়। বিএনপি যেসব সংস্কার প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলোসহ গণভোট চায়। জামায়াত চায় নোট অব ডিসেন্ট মুক্ত গণভোট।
এসব বিরোধ মেটাতে আলোচনায় সমাধানের রাস্তা বের হবে আশা প্রকাশ করলেও ডা. তাহের বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, একটি দল হঠাৎ সেখান থেকে সরে এসেছে। দলটির কোনো নেতা সংস্কার দরকার নেই, এমন কথা বলছেন। কেউ জুলাই সনদ চাইলেও ভিন্নমতের উল্লেখ চেয়েছেন। আবার কেউ সনদের আইনি ভিত্তি চাইলেও একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট চাইছেন। তাদের দলীয় বক্তব্য স্পষ্ট করা দরকার। তারা যদি আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে জটিলতা কমে যাবে। সেটাকে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো স্বাগত জানাবে।
দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট নির্বাচনের আগে বা পরে করে লাভ নেই। সনদটাই মূল বিষয়। সনদের জন্য গণভোট অপরিহার্য।
ইসলামী আন্দোলনের আমির তথা চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, জুলাই সনদের আইনীভিত্তি হলো প্রধান বিষয়। তা না হলে বর্তমান সরকার এবং আগামী নির্বাচনী আইনি প্রশ্নের মুখে পড়বে। গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে তা দুঃখজনক। বিএনপির আচরণের কোন অর্থ আমি বুঝি না।
বাংলাদেশ খেলাফতের আমির মামুনুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে একমতের জায়গায় পৌঁছাবে, সেই স্পেসটা রাখতে চাই।
জোট শরিকের প্রতীকে নির্বাচন করা যাবে না- এ বিধান রেখে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন করা হয়। বিএনপির দাবিতে এ সংশোধনী বাতিলের উদ্যোগের সমালোচনা করে মামুমুল হক বলেছেন, আরপিওতে নতুন করে কোনো পরিবর্তন মানা হবে না।
আট দল জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে আদেশের ওপর নভেম্বরে গণভোট, উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমির আব্দুল বাসিত আজাদ, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বিডিপির মহাসচিব কাজী নিজামুল হক নাঈম প্রমুখ।