বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি স্টার্টআপ এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছে, যা দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্যক্তিদের দেখার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা একটি ‘রেটিনা ইমপ্লান্ট’ বা চোখের পর্দায় স্থাপনযোগ্য যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা হারানো দৃষ্টি পুনরুদ্ধারে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে।
এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনটি এসেছে ‘সায়েন্স কর্পোরেশন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে, যা ইলন মাস্কের নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। তাদের এই প্রযুক্তি ‘আর্টিফিশিয়াল ভিশন’ বা কৃত্রিম দৃষ্টি নামে পরিচিতি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কৃত্রিম দৃষ্টি ব্যবহার করে ‘ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন’ (এএমডি) রোগে আক্রান্ত রোগীরা লেখা পড়া এবং ক্রসওয়ার্ডের মতো ধাঁধা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। এএমডি মূলত বয়স্কদের একটি রোগ, যেখানে চোখের রেটিনার ম্যাকুলা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে ব্যক্তির কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি বা সরাসরি সামনে দেখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, যা বিশ্বব্যাপী অপরিবর্তনীয় অন্ধত্বের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
‘প্রিমা’ নামক এই নতুন ‘ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেইস’ সিস্টেমে একটি ক্যামেরা সংযুক্ত চশমা রয়েছে। এই চশমা ব্যবহারকারীর পারিপার্শ্বিক দৃশ্য ক্যামেরার মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং সেটিকে সংকেতে রূপান্তরিত করে। এরপর তারবিহীনভাবে সেই সংকেত রেটিনার নিচে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্থাপন করা একটি চিপে পাঠায়। চিপটি সেই সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরণ করে, যার ফলে রোগী এক ধরনের কৃত্রিম দৃষ্টি ফিরে পান।
এএমডি রোগীদের ওপর এক বছর ধরে চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, ‘প্রিমা’ সিস্টেম ব্যবহার করে তারা সংখ্যা ও শব্দ সফলভাবে শনাক্ত করতে পারছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মোট ৩৮ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১২ মাস ব্যবহারের পর তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগীর মধ্যে "ক্লিনিক্যালি মিনিংফুল ইমপ্রুভমেন্ট" বা চিকিৎসাগতভাবে অর্থপূর্ণ উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এনেছে।
উল্লেখ্য, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের দৃষ্টিশক্তি হারানোর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো এএমডি এবং বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ‘প্রিমা’ প্রযুক্তির আগে এই রোগের কোনো সম্পূর্ণ নিরাময় ছিল না।
‘সায়েন্স কর্পোরেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ম্যাক হোডাক বলেন, "এই যুগান্তকারী সাফল্য অসহায় রোগীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। ‘প্রিমা’ দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উৎসাহিত।"
মজার বিষয় হলো, ম্যাক হোডাক নিউরালিংকের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যদিও নিউরালিংকেরও লক্ষ্য মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা, তবে তারা এখনও এই ক্ষেত্রে এমন সাফল্য দেখাতে পারেনি।
এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত গবেষণাটি "নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন"-এ প্রকাশিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন