তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যখন থেকে আমরা স্বাধীন হলাম, তখন থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার, প্রত্যাশা ছিল একটা বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার, অনেক বছর পরে এখন আবার মনে হচ্ছে ওই জিনিসগুলো আমরা অর্জন করতে পারিনি, পারিনি বলেই তো গণঅভ্যুত্থান-বিপ্লব হলো। আমরা আজকে এমন একটা সন্ধিক্ষণে আছি, যেখানে আমরা একটা শাসন ব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে নতুন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবো।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন আছে, আমরা খুবই আশা করছি, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবো। এজন্য যেখানে কেবল মাত্র একটা নির্বাচনই হচ্ছে না একটা গণভোটও হচ্ছে। যেখানে সংস্কার প্রশ্নে বড় কতগুলো বিষয়ে জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবে। এখন তার ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রের যাত্রাটা এবার পরিবর্তিত আকারে শুরু হতেই পারে।
তিনি বলেন, এটা তো সত্য কথা ৫৪ বছর পরেও যখন একটা গণঅভ্যুত্থান হতে হয়, তার অর্থ হচ্ছে ৭১-এর যে স্বপ্ন, বিশ্বাস, প্রত্যাশাটা আমাদের ছিল, রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারেনি। আমরা আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। একটা বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নটা আমাদের এখনও রয়ে গেছে অধরা, সেটি আমরা পূর্ণতার দিকে যাত্রাটা শুরু করতে পারবো।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা খুবই দুঃখজনক বিষয়; আমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় দেখা যায় আমরা যুক্তি দিয়ে তর্ক দিয়ে না করে হত্যাচেষ্টাটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত, এটার মধ্যে তো কোনও বীরত্ব নেই, আপনার যদি শক্তি থাকে, আপনি জনগণের মুখোমুখি হন, জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয়, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তো সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা না করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই যে একটা সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা কোনোভাবেই নতুন বাংলাদেশে গ্রহণ করার কোনও সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।
সরকার জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কি-না প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, একটা টেন্ডেন্সি দেখি, আপনারা ব্যর্থ নাকি সফল, একটা এক দেড় বছরের সরকারের ব্যর্থ আর সফলতার গল্পটা একটু অন্যভাবে বিচার করতে হবে এইজন্য আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটা নিয়েছিলাম, তখন একটা একেবারে ভেঙে পড়া অবস্থাকে নিয়ে আমরা কাজটা শুরু করেছি। সেই ভেঙে পড়া অবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রটাকে আবার একটা যাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজটা করেছি। সেখানে আমি এই সরকারকে ব্যর্থ বা সফল কোনোটা বলারই সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ সরকার তখনই সফল হবে যখন দেখা যাবে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সরকারের যাত্রা, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার করা এবং সংস্কার করা সেগুলো শেষ পর্যন্ত গিয়ে আমরা সফল হবো।
বর্তমান সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা দেওয়ার যতটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি থাকে, সবটুকু স্বাভাবিক প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের আঘাতটা নিয়ে, স্বাভাবিক প্রস্তুতির চেয়েও বেশি কিছু আমাদের নিতে হবে। কারণ প্রতিপক্ষ আরও বেশি সংগঠিত এবং সে পিছন দিক থেকে আঘাত করছে। এই যে পেছন দিক থেকে আঘাত, এটার বিপরীতে আমাদের আরও বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করছি আমরা। আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি।
নির্বাচনে আইন পরিস্থিতি কেমন হবে প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন। স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে লোকে ভোট দিতে পারবে। এখন এটাকে ব্যহত করার জন্য একটা শক্তি সমাজে কাজ করছে। সে শক্তিটাকে আমাদের প্রতিহত করতে হচ্ছে, একইসঙ্গে আমাদের একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে আমরা বলে দিতে পারি, আমরা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বতঃস্ফূর্ত একটা নির্বাচনের দিকে তাকাচ্ছি, অবশ্যই এটার বিপরীতে দেখতে পাচ্ছি আরও বেশি প্রকট করে, প্রতিপক্ষ যে আঘাতগুলো হানছে, সেগুলো আসলে রক্তাক্ত একটা সংঘাতময়, সেটার জন্য আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা জনগণের উদ্দেশে বলা দরকার— আমাদের ভীত করে ফেলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণকে আশ্বস্ত করা— যাতে করে জনগণের মধ্যে ভয়ের সংক্রমণটা না হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আইএ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন