অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার কথা বলা জামায়াতে ইসলামী এখন ভোটের জন্য তাড়া দিচ্ছে। গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে জামায়াত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে দলটি এখন বলছে– ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ীই নির্বাচন হতে হবে।
গতকাল সোমবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত তপশিল ঘোষণার দাবি জানান। বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, জামায়াত ইসিকে বলে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করতে চাইলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে তপশিল ঘোষণা করতে হবে।
নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে গত সেপ্টেম্বর থেকে পরের তিন মাস আন্দোলন করে জামায়াত। তবে দলটি এ অবস্থান থেকেও সরে এসেছে। গতকাল জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘গণভোট ও নির্বাচন একসঙ্গে হলে দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে বলে মনে করি না। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হওয়া দরকার।’
সাম্প্রতিক সময়ে দলটির অবস্থানের এ পরিবর্তন বিষয়ে জামায়াতের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে না ফেরার কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জোর দিচ্ছে।
কী কারণে এ দাবি জানাচ্ছে– এ বিষয়ে জামায়াত নেতারা বলেন, প্রার্থী বাছাই, আসন ও ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাওয়াসহ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দল পরিচালিত জরিপগুলোতে ইতিবাচক ফলাফলের আভাস আসছে। তাই সবকিছু অনুকূলে থাকা অবস্থায় নির্বাচন করা জরুরি।
২৫ বছর বিএনপির সঙ্গে জোটে এবং যুগপৎ আন্দোলনে ছিল জামায়াত। দলটির ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসেবে জোট সরকার এবং আন্দোলনে ছিল।
জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সমকালকে বলেন, নির্বাচনে জয় বা খুব বাজেভাবে পরাজিত হওয়াসহ যে কোনো ফলাফল হতে পারে। তবে মূলকথা হচ্ছে, জামায়াত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তাই নির্বাচন হয়ে যাওয়াই ভালো। নির্বাচন পেছালে জামায়াতের লাভ নেই। বরং যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা বিঘ্নিত হতে পারে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার চেষ্টা করে জামায়াত। গত মে মাসে সরকারের নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর রাজনীতির মাঠে বিএনপির পরেই বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জামায়াত। আগামী নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপেও একই তথ্য আসছে। বিএনপিকে টেক্কা দিতে জামায়াত আরও সাত দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করছে। এতে এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলকে টানার চেষ্টা করছে।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকেই নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার ছিল বিএনপি। দলটি এখন পর্যন্ত ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আসন নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। বিএনপির মনোনয়ন ও প্রার্থিতা নিয়ে বিভিন্ন আসনে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং তারেক রহমানের অনুপস্থিতি প্রচারে বিএনপিকে অসুবিধায় ফেলবে বলে জামায়াতের মূল্যায়ন।
দলটির একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গত ১৬ মাসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ এবং প্রার্থিতা নিয়ে কোন্দলের কারণে নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে পুরোপুরি প্রস্তুত মনে হচ্ছে না। এ কারণে যারা একসময়ে নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করছিল, তারা এখন কিছু বলছে না। তপশিলের জন্য চাপ দিচ্ছে না।
জামায়াত গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে।
‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে সর্বাত্মক প্রচারও চালাচ্ছে জামায়াতসহ আট দল। এর মাধ্যমে দলগুলোকে নিজেদের সংস্কারের পক্ষের শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। জুলাই জাতীয় সনদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণসহ কিছু প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে ভোটের মাঠে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে জামায়াত। দলটির একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপি ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে না থাকায় তারা ‘না’ ভোটপন্থি; মানে সংস্কার চায় না– এই বার্তা ভোটের মাঠে জামায়াত পৌঁছে দেবে।
মন্তব্য করুন