বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ, যিনি 'স্বপ্নের নায়ক' হিসেবে কোটি ভক্তের হৃদয়ে চিরকাল রাজত্ব করে যাচ্ছেন, তার অভিনয় জীবনের গল্প শুধু সিনেমার পর্দাতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং, বাস্তবেও তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভক্তদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল অভূতপূর্ব। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও, তার সম্পর্কে ভক্তদের অমলিন ভালোবাসা আজও অব্যাহত।
সালমানের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, এটি হত্যাযজ্ঞ। ২৯ বছর হতে চললেও এখনো এটি স্পষ্ট হয়নি যে তাকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এর আগে রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের এক তরুণ আদালতে সালমানকে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে সালমানের মা হত্যার অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে আদালতে নালিশি মামলা করেন। ওই ১১ আসামি হলেন: সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ধনাঢ্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই, রেজভী আহমেদ ফরহাদ, চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা আশরাফুল হক ডন, নজরুল শেখ, ডেভিড, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ এবং সালমানের বাসার গৃহকর্মী আবুল হোসেন খান।
রেজভী আহমেদ তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিলেন, ডনের নেতৃত্বে সালমানের বাসায় গেলে নিচতলার একটি দরজা খুলে দিয়েছিলেন রুবি। রুবির ঘর থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই বের হয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। রুবি ইস্কাটনে যে ভবনে সালমান থাকতেন, তার সামনে মে ফেয়ার নামে একটি বিউটি পারলার চালাতেন এবং তার চীনা স্বামী রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতেন।
এদিকে ২০১৭ সালে রাবেয়া সুলতানা রুবি ইউটিউবে ছাড়া একটি ভিডিওতে বলেন, "সালমানকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই খুনের বিষয়ে আমি সব জানি। যেভাবেই হোক আবার যেন মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমি যেমন করেই হোক আদালতে সাক্ষ্য দেব।"
ভিডিওতে সালমানের মা নীলুফার চৌধুরীকে (নীলা ভাবি) উদ্দেশ করে রুবি বারবার বলেছেন, "ইমন আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে। নীলা ভাবি, প্লিজ, কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।...আমার হাজব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে।...সামিরার ফ্যামিলি করাইছে...। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির লাশ যদি কবর থেকে তুলে ঠিকমতো আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।...ওরা আমারেও খুন করার চেষ্টা করছে। এই কেস যেন না শেষ হয়।"
সেসময়ে মামলাটির তদন্ত সংস্থা পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, "সালমান শাহের বিউটিশিয়ান হিসেবে ছিলেন রুবি। সালমানের বাসায় প্রায়ই যেতেন। ঘটনার আগে-পরে ওই বাসাতেই তার অবস্থান ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পরে রুবি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। আমরা তাকে খোঁজার ব্যাপক চেষ্টা করেছি। অনেক দিন পরে তাকে পেলাম ইউটিউবে। তবে তার কথাগুলো যাচাই করে দেখতে হবে তা কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা। আবার এমনও হতে পারে কেউ তাকে দিয়ে বলাচ্ছে। এসবই তদন্তের বিষয়।"
যোগাযোগ করা হলে লন্ডনে অবস্থানরত সালমান শাহর মা নিলুফার চৌধুরী বলেছিলেন, "তার এ বক্তব্যের পরে বলার আর কোনো অপেক্ষা রাখে না যে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। আমি জানতাম এই দিনটা আমার আসবে। রুবি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় আছে। তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আর রুবি যাদের নাম বলেছে, তাদের এখনই গ্রেপ্তার করা হোক।" তিনি আরও বলেন, "আমি বিচার চাই। এত বছর আমি হতাশায় ভুগছি। দেশে আমারও নিরাপত্তা নেই। যার কারণে আমি লন্ডনে আছি।"
মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্রজীবনে সালমান শাহ ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন