আইনি জটিলতা এড়াতে তৎপর বিএনপি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অংশগ্রহণ নিয়ে আইনি ও সময়গত এক জটিল চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। দলীয় সূত্রে তার চলতি (নভেম্বর) মাসের শেষে দেশে ফেরার কথা জানানো হলেও, নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে তাকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকায় নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, যা তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনাকে এক কঠিন সময়সীমার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
মূল চ্যালেঞ্জ: নির্বাচনে লড়তে হলে তারেক রহমানকে অবশ্যই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরে ভোটার হতে হবে।জটিল প্রক্রিয়া: তফসিলের পর ভোটার হতে হলে আদালতের বিশেষ অনুমতি এবং পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত জটিল।
- তফসিলের আগেই ভোটার হতে হবে
- ২০০৮ সালের জটিলতা
- তফসিলের পরে ভোটার হওয়া ‘অত্যন্ত জটিল’
- প্রার্থী তালিকা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
নির্বাচন কমিশনের প্রবিধান অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত ভোটার তালিকা চূড়ান্ত বলে গণ্য হয় এবং এই সময়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি বা স্থানান্তর সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। তারেক রহমানকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে, তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং ভোটার নম্বর গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারেক রহমান নভেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এই দুই সময়সীমা বিবেচনায়, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর ভোটার হওয়ার জন্য হাতে মাত্র কয়েক দিন সময় পাবেন।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ওই সময়ে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান দুজনেই লন্ডনে অবস্থান করায় ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যদিও ডা. জুবাইদা রহমান কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে ভোটার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু তারেক রহমান এখনো ভোটার নন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) প্রবাসী শাখা সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের ভোটার করার কার্যক্রম চালু থাকলেও (লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টার), তারেক রহমান সেখানে ভোটার হওয়ার জন্য কোনো আবেদন করেননি। ইসিকে জানানো হয়েছে, তিনি বাংলাদেশেই ফিরে ভোটার হবেন।
যদি কোনো কারণে তারেক রহমান তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার হতে ব্যর্থ হন, তবে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যাবে। এনআইডি অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তফসিলের পরে ভোটার হওয়া প্রায় অসম্ভব।
তিনি জানান, "তফসিলের পরে ভোটার হতে গেলে কোর্ট থেকে একটি বিশেষ ডিক্লারেশন (ঘোষণা) লাগে। শুধু তাই নয়, এরপর নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চে (পাঁচ কমিশনার) বৈঠক হতে হয়। সেই বৈঠকে সকল কমিশনারকে সর্বসম্মতভাবে একমত হতে হয়। যদি পাঁচজনের মধ্যে একজন কমিশনারও দ্বিমত পোষণ করেন, তবে তিনি আর ভোটার হতে পারবেন না।"
বিএনপি ইতোমধ্যে আসন্ন নির্বাচনের জন্য ২৩৭টি আসনে তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এই তালিকায় তারেক রহমানকে বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু তার এই মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে বৈধ হওয়ার জন্য ভোটার তালিকার এই আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করা অপরিহার্য।
সব মিলিয়ে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তের এই 'মাহেন্দ্রক্ষণে' ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ওপর তার নির্বাচনী ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন