সিলেট বিভাগের ভূ-প্রকৃতি পাহাড়-টিলা-সমতল ও হাওড় অধ্যুষিত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদের তিন দিকেই ভারত সীমান্ত। আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় এই তিন রাজ্যেই উগ্রবাদীদের তৎপরতা বেশি। প্রতিটি উগ্রবাদী সংগঠনই অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হাত বদল হয়ে তাদের অস্ত্র-বিস্ফোরক অহরহ ঢুকছে সিলেট সীমান্ত দিয়ে।
অতীতের সব অস্ত্র-বিস্ফোরক চালান আটক ও বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের জবানিতে এমন তথ্য বারবার উঠে এসেছে। এছাড়া বিগত সরকারের সশস্ত্র ক্যাডারদের অস্ত্রের মহড়া, জুলাই আন্দোলনে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি ও থানাসহ পুলিশ প্রশাসনের অস্ত্র লুটের পর চরম ঝুঁকিতে সিলেট অঞ্চল। সর্বস্তরের রাজনীতিক, সচেতন মহল ছাড়াও খোদ প্রশাসনও নির্বাচন সামনে রেখে এ নিয়ে আছে সংশয়ে।
দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর মাঠের তৎপরতা বেড়েছে। এই প্রচারণার ভিড়ে মিশে যাচ্ছে অস্ত্রধারী, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও। তাদের দ্বারা যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। ফলে মনোনয়ন যুদ্ধ শেষে, ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রার্থী, রাজনীতিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে অপরাধীদের হস্তগত হয়ে পড়া অস্ত্র উদ্ধারের কথা বারবার শোনা গেলেও বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন নেই। নানা প্রতিবন্ধকতার কথা খোদ প্রশাসনের কর্তাদের মুখে।
সিলেটের পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি আমার কিছু বক্তব্য ভুলভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপিত হয়েছে। মূলত নির্বাচন সামনে রেখেই কথাগুলো বলেছিলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনের সব প্রার্থীসহ জননিরাপত্তা প্রদান করা পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই নির্বাচনপূর্ব প্রচারণায় সব প্রার্থী ও দলকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন ও তাদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্রিফিংয়ের প্রয়োজনের কথা বলে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, অস্ত্র উদ্ধারও অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অব্যাহত অভিযান আরও জোরদারের প্রস্তুতি রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনে প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীরা শুধু নির্বাচন নয়, সব সময়ই সমাজের জন্য হুমকি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সামনে রেখে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আগেই অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান জরুরি।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, সিলেটে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এখন থেকেই আঁচ করা যাচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারণা সবেমাত্র শুরু। এখনই প্রচারণায় বাধা, হুমকি-ধমকি শুরু হয়ে গেছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থানা ও পুলিশের যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে তা উদ্ধারই হয়নি। আর আগে বিভিন্ন সময়ে যেসব প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া হয়েছে সেসবও উদ্ধার হয়নি আজও। এসব অস্ত্র উদ্ধার অত্যন্ত জরুরি। নতুবা প্রশাসনকে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।
মন্তব্য করুন