পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ মঙ্গলবার কারাবন্দি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার দলকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ডন।
এই সিদ্ধান্তটি আসে কয়েক দিন পর, যখন ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনসের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী খানকে ‘সেনাবিরোধী’ বয়ান তৈরি ও ছড়ানোর জন্য আক্রমণ করেন এবং বলেন, এ ধরনের বয়ান আর রাজনীতির পরিধিতে নেই, বরং তা এখন ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ হয়ে উঠেছে।
এরপর থেকে ওই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পিটিআই নেতৃত্বের মধ্যে বাগযুদ্ধ চলতে থাকে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ইমরান অতীতেও বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ভাষা’ ব্যবহার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলার কোনো অধিকার পিটিআইয়ের নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলটি সামরিক মুখপাত্রের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেওয়া ‘হাস্যকর’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায় এবং বলে, তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি নন’।
পিএমএল-এনের এমপিএ তাহির পারভেইজ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পিটিআই আইনপ্রণেতারা অধিবেশন বয়কট করলে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবে পিটিআই বা এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
প্রস্তাবে বলা হয়, ‘যে প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানকে সব ফ্রন্টে সুরক্ষা দেয় এবং ভারতের মতো পাঁচ গুণ বড় শত্রুকেও সফলভাবে মোকাবেলা করেছে, সেগুলো দেশের অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এতে আরো বলা হয়, ‘শত্রু রাষ্ট্রের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক দল এবং এর প্রতিষ্ঠাতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।
তার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী বক্তব্য দেওয়া এবং বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে।’ প্রস্তাবে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক—যে কোনো দলের নেতা হোন না কেন—আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাদের ‘যথোপযুক্ত শাস্তি’ দিতে হবে।
এতে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্য ও নেতৃত্বকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ফেডারেল সরকার পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ইমরান, সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এবং সাবেক জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির বিরুদ্ধে সংবিধানের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে মামলা চালানোর উদ্যোগ নেয়।
এই পদক্ষেপটি সংরক্ষিত আসন মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর জাতীয় পরিষদে পিটিআইকে একক বৃহত্তম দল হয়ে ওঠা থেকে ঠেকানোর চেষ্টা বলেই মনে করা হয়েছিল।
তবে সরকার শেষ পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেনি। অক্টোবরে ফেডারেল সরকার সহিংস বিক্ষোভের পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (এটিএ) আওতায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তেহরিক–ই–লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) ওপর নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করে।
তবে পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। সামরিক শাসন থেকে শুরু করে তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সময়কাল পর্যন্ত—দশকের পর দশক ধরেই দেশটিতে এই চর্চা চলে আসছে।
মন্তব্য করুন