টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল যখন সাফল্যের ধারায় ছিল, ঠিক তখনই বিশ্বকাপের আগে নেতৃত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। টানা ৩টি সিরিজ জয় এবং এশিয়া কাপের ফাইনালের লড়াইয়ে থাকা দলটিকে নিয়ে যখন ভক্তরা আশায় বুক বাঁধছিলেন, তখন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এল।
চলতি বছরের শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্ব পেলেও লিটন আগে থেকেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির কাণ্ডারি। ২০২৪ সালের শেষ সিরিজে তার অধীনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়ক হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে হারলেও, পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এমনকি আফগানিস্তানকেও ৩-০ ব্যবধানে হারায় দলটি। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলটি একটি ভালো মোমেন্টাম বা ছন্দে ছিল।
কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের দলে শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে বাদ দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লিটন। তার অভিযোগ, অধিনায়ক হিসেবে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। শামীম রানে না থাকলেও তাকে নিয়ে অধিনায়কের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাকে কিছু না জানিয়েই দল থেকে বাদ দিয়েছেন নির্বাচকরা।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিটন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শামীম থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। এটা আমার কল (সিদ্ধান্ত) না, পুরোপুরি নির্বাচকদের কল। আমি জানি না কেন, কিন্তু নির্বাচকেরা আমাকে কোনো কিছু নোটিশ করা ছাড়াই শামীমকে বাদ দিয়ে দিয়েছে দল থেকে।”
তিনি আরও জানান, বোর্ড ও নির্বাচক প্যানেল থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাকে যে দল দেওয়া হবে, তা নিয়েই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “আমি এত দিন জানতাম, যখন অধিনায়ক হয় মানুষ, তার দল গোছানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেওয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়ে ভালো কিছু দেওয়া মাঠে।”
অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু কোনো রাখঢাক না রেখেই জানিয়েছেন, অধিনায়কের চাওয়া পূরণ করা তাদের প্রধান লক্ষ্য নয়। তিনি বলেন, “আমাদের কারও অনুমতি নেওয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ, আমরা তাদের মতামত নিয়েছি। এটা আমাদের চাকরি। আমি কী বলব যে অধিনায়ক-কোচ যেভাবে বলেছে, সেভাবে দল দিয়ে দিয়েছি? তাহলে আর আমাদের থাকার দরকার কী?”
অধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতায় এমন হস্তক্ষেপ চলতে থাকলে নেতৃত্বে থাকবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে লিটনের স্পষ্ট জবাব, “ওটা পরে দেখা যাবে।” এরপর বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি নেতৃত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমি থাকি কি না দেখেন!”
লিটনের এমন মন্তব্যে বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন করে অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মারুফ/সকালবেলা
মন্তব্য করুন