বরিশাল-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান তার নিজের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান জামায়াতের রাজনীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় এবং ছাত্রশিবিরে যোগ না দেওয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
রবিবার (৯ নভেম্বর) কামরুল ইসলাম খান তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এই ঘোষণা দেন।
জানা যায়, গত ৭ নভেম্বর 'বিপ্লব ও সংহতি দিবস' উপলক্ষে গৌরনদীর পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন জামায়াত প্রার্থী কামরুল ইসলামের ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান।
বক্তব্যে আরাফাত বিল্লাহ বলেন, "আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারা কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন?" জনসভা থেকে এসময় সমস্বরে 'না' উত্তর আসে। আরাফাত তখন বলেন, "কেন করবেন না? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই।"
ছেলের এই বক্তব্যের পর, কামরুল ইসলাম খান ৮ নভেম্বর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, "আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে ৭ নভেম্বর গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তাতে কেহ হতাশ হবেন না।... আমরা যখন দাঁড়িপাল্লা মার্কা নিয়ে মাঠে নেমেছি, বিজয়ের মালা জামায়াতে ইসলামীর হবেই হবে।"
এরপর ৯ নভেম্বরের স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, "আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।... আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য।" যদিও তিনি পরবর্তীতে এই ফেসবুক পোস্টটি মুছে ফেলেন।
এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, "আমার ছেলের দেওয়া বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। ছেলেটার বক্তৃতায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পরিচয় দেওয়ার পরেই সে কথাটা বলেছে।"
তিনি স্বীকার করেন, তার ছেলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পদেও ছিল। তিনি বলেন, "আমি জামায়াতের রাজনীতি করি। এজন্য আমার ছেলেও চাপে রয়েছে। কারণ এই খবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলে শিবির করবে। আমার মতো জামায়াতের নেতা হবেন। কিন্তু তা না করে বিরোধী পক্ষের রাজনীতি করে আমাকে রাজনৈতিক ও মানসিক চাপে ফেলেছে।"
অন্যদিকে, বাবা ও ছেলের দুই দলের রাজনীতি নিয়ে পারিবারিকভাবে বিপাকে থাকার কথা স্বীকার করেছেন আরাফাত বিল্লাহ খানও। তিনি বলেন, "আমি আমার পার্টির প্রতি দায়িত্ববান। বাবা জামায়াত করেন এটা তার পছন্দের বিষয়, আমি বিএনপি করি এটা আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত।"
আরাফাত আরও জানান, তিনি সচেতনভাবেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং অন্য কোনো দলের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন না। তবে তার বাবা মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন