ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সে জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসছে দলটি। গত দুই দিনে দলটির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শুনিয়েছেন ত্যাগের গল্প। এতে বৈঠকে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে দলের সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। বৈঠক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ছিলেন বেশ আবেগঘন।
তিনি দেশ, জাতি, দল ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। খালেদা জিয়া কিভাবে নিজের, নিজ পরিবারের সুখের কথা ভুলে গিয়ে শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন, কারাবরণ করে নিয়েছেন, তা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে তুলে ধরেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পাঁচ সাংগাঠনিক বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সঞ্চালনা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। এর আগে গত রবিবার দলের সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
বৈঠকে থাকা বিএনপি নেতারা জানান, ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে হামলা, মামলা, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাদ যাননি দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। ১/১১ কিংবা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় চাইলেও বিদেশে যেতে পারতেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু দেশ, গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করে এর পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছেন কারাবরণ, যেখানে বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছে, ভুগছেন চিকিৎসাবিহীন দীর্ঘ কারাবাসের যন্ত্রণা। গণতন্ত্রের স্বার্থে আপসহীন থাকায় সহ্য করতে হয়েছে নিজ পরিবারের ওপর নির্যাতনও। তার পরও তিনি মাথা নত করেননি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের দীর্ঘ এই লড়াই-সংগ্রামে বেগম জিয়া থেকে শুরু করে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, জনি, চৌধুরী আলমসহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দেশ, গণতন্ত্র ও দলের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকারের মানসিক প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় সবার জন্য বিদজ্জনক পরিস্থিতির সতর্কতাও দিয়েছেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুজন মা একটি শিশুকে দাবি করার গল্পও শোনান তারেক রহমান। এরপর বিচারের জন্য গেলে কাজী ওই শিশুকে ভাগ করে দুজনকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এতে প্রকৃত মা সন্তানকে ভাগ না করে অন্যজনকে দিয়ে দিতে বলেন। এতেই কাজি বুঝে যান ওই শিশুর প্রকৃত মা কে। তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও দলের জন্য, ধানের শীষের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
মন্তব্য করুন