মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা ব্যুরো: খুলনা নগরকে ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু-সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে নগরবাসীর অংশগ্রহণ এবং বহুমাত্রিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে সিয়াম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগর হলেও দ্রুত নগরায়ন, জলবায়ু বিপর্যয়, কর্মসংস্থানের সংকট এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে নগরী নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটলেও সামাজিক বৈষম্য ও মৌলিক সেবার ঘাটতি দূর হয়নি। বন্যা, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ুজনিত দুর্যোগ এবং উপকূলীয় অঞ্চল থেকে অভিবাসীদের আগমন নগরের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সেবা ও পয়ঃনিষ্কাশনের মতো মৌলিক সুবিধা এখনো অধরা, যা ন্যায্য উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, ২০০২ সালে পাটকল ও টেক্সটাইল মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে খুলনায় আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অনানুষ্ঠানিক কাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
সভায় ‘একটিভ সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম’-এর কার্যক্রম বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও সোশ্যাল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইনক্রিজিং এনালাইসিস মুভমেন্ট (সিয়াম)-এর সহযোগিতায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং নীতি নির্ধারণে নাগরিক মতামত প্রতিফলনে কাজ শুরু করেছে।
বক্তারা বলেন, স্থানীয় জনগণ, বিশেষত নারী, শিশু, যুব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়, তখন নগরের উন্নয়ন আরও সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। টেকসই নগর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ওয়ার্ডভিত্তিক মতামত সংগ্রহ, নাগরিক তদারকি দল গঠন, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সমস্যার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) দেব প্রসাদ পাল, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সায়েদুর রহমান ও হেড টিচার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এড. মাসুম বিল্লাহ; মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উম্মে জোয়ায়রা (নাবিলা) ও সীমান্ত সাহা রাতুল।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সহযোগিতা ও সচেতনতার মাধ্যমে খুলনা একটি ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু-সহনশীল নগরীতে পরিণত হবে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন