পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে পাশ কাটিয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও চীনকে যুক্ত করে শুরু হওয়া ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা দ্রুতই অন্যান্য দেশে বিস্তৃত হতে পারে।
বুধবার ইসলামাবাদে ‘ইসলামাবাদ কনক্লেভে’ তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রচলিত আঞ্চলিক কাঠামো স্থবির হয়ে পড়ায় বিকল্প উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি। পাকিস্তান ‘জিরো-সাম’ কূটনীতির বিরোধী এবং সংঘাত নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সংস্থা সার্ক (SAARC) বহু বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার কারণে কার্যত অচল হয়ে আছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সর্বশেষ কাঠামোগত সংলাপও ১১ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ।
জোট গঠনের প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের এই উদ্যোগকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। একদিকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের তীব্র উত্তেজনা বেড়েছে (চলতি বছরের মে মাসে সীমিত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল), অন্যদিকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় এবং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার জেরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও বড় ফাটল ধরেছে।
এই জটিল পরিস্থিতিতে ভারতকে ছেঁটে ফেলে পাকিস্তানের নতুন আঞ্চলিক উদ্যোগকে অনেকেই ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব সীমিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা
ইসহাক দার বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা মূলত অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রগুলোয় ‘পারস্পরিক উপকারিতা’ বাড়াতে চাইছে। তিনি পরোক্ষভাবে ভারতের একক প্রভাবকে ইঙ্গিত করে বলেন, "আমাদের জাতীয় উন্নয়ন কারও একগুঁয়েমির কাছে জিম্মি হতে পারে না।"
তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান এমন একটি দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখে যেখানে বিভাজনের জায়গায় যোগাযোগ গড়ে উঠবে, বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা হবে এবং মর্যাদার সঙ্গে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোরও ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে দোদুল্যমান সম্পর্কের’ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এই প্রস্তাবটি এখনই বাস্তবায়নের চেয়ে বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি অভিপ্রায়ের ঘোষণা। লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসএসপিআর-এর পরিচালক রাবিয়া আখতারের মতে, সার্কের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য দুটি বৃহত্তম সদস্য দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ঐকমত্য জরুরি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রভীন দোণ্তি মনে করেন, সার্কের অচলাবস্থা নতুন ফোরামের জন্য শূন্যতা তৈরি করেছে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এই উদ্যোগ সফল হবে কি না তা নির্ভর করছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানের মতো সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর। তারা ইস্যুকেন্দ্রিক এই জোটে যোগ দিলে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের রাজনৈতিক মূল্য কতটা দিতে হবে, সেটিও বিবেচনা করবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য খুবই কম—যা মোট বাণিজ্যের মাত্র প্রায় ৫ শতাংশ। আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমাতে পারলে এই অঞ্চলের বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন