বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের বদরগঞ্জে সরকারি অনুমোদিত সারের গুদামঘরে দুর্বৃত্তের হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং জমি দখলচেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হরে কৃষ্ণ কুন্ডু (মনি কুন্ডু)। তিনি অভিযোগ করেছেন, "দুর্বৃত্তরা শুধু গুদাম ভেঙেই যায়নি, থানার ভেতরেও আমাকে নাড়িভুঁড়ি বের করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমার পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায়।"
বুধবার বিকেলে বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি পুরো ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। হরে কৃষ্ণ জানান, ১৯৯৯ সালে তিনি বদরগঞ্জ পৌরসভার মুন্সিপাড়া মোড়ে তিন শতক জমি ক্রয় করে পাকা সার গুদাম নির্মাণ করেন। তার স্ত্রী বিএডিসির অনুমোদিত সার ডিলার এবং তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আইনসম্মতভাবে সার ও কীটনাশকের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তার গুদামের পাশে জমি রয়েছে বদরগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদের। সম্প্রতি আবু সাঈদ দাবি করতে শুরু করেন যে, ব্যবসায়ীর গুদামের অংশ তার জমি দখল করে নির্মিত।
১৮ নভেম্বর রাত সাড়ে সাতটার দিকে আবু সাঈদের নেতৃত্বে ৮–১০ জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ এসে পাকা ছাদওয়ালা গুদামঘরের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। তারা গুদামের দরজা ভেঙে ৭৫ বস্তা জৈবসার, ৩০০ বস্তা জিপসাম এবং ৮৫ বস্তা ডলোচুন লুট করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, "গুদামের ছাদ পর্যন্ত ভেঙেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় খবর দিই। কিছু পুলিশ এলেও হামলাকারীরা থামেনি।"
রাত প্রায় পৌনে ১১টায় বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চাক্ষুষ করেন এবং আবু সাঈদকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে আসেন।
তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে মোড় নেয় বলে দাবি করেন হরে কৃষ্ণ। তিনি বলেন, "ওসি আমাকে থানায় ডাকলেন। ঠিক তখনই পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভুট্ট লোহানীর নেতৃত্বে কয়েকজন এসে ওসি সাহেবকে প্রশ্ন করে—'কেন আবু সাঈদকে থানায় আনা হয়েছে?' তারা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে তোমাদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলবো, নাশকতার মামলায় জেলে পাঠাব! থানার ভেতরেই আমার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।" তিনি দাবি করেন, থানার সামনেই ভুট্ট লোহানী ও তার সহযোগীরা আটককৃত আবু সাঈদকে জোরপূর্বক বের করে নিয়ে যায়।
ঘটনার পর তিনি আবু সাঈদ, ভুট্ট লোহানী, আরিকুল ইসলামসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০–১৫ জনকে আসামি করে লিখিত এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু একটানা আট দিন পেরিয়ে গেলেও থানা মামলা নেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, "মামলা না নেওয়ায় হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি গুদামঘরের জায়গা দখল করতে আবারও তৎপরতা শুরু করেছে।"
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, "আমার পরিবারকে রক্ষা করুন। গুদামঘর ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। থানার ভেতরে যারা আমাকে হুমকি দিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনুন। আমরা ন্যায়বিচার চাই, নিরাপত্তা চাই।"
এম.এম/সকালবেলা
মন্তব্য করুন