ইরানে আয়োজিত এক ম্যারাথনে নারীদের মাথায় হিজাব না থাকাকে কেন্দ্র করে দুই আয়োজককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) কিশ দ্বীপে আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর পর দ্রুতই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ম্যারাথনে প্রায় দুই হাজার নারী ও তিন হাজার পুরুষ আলাদা বিভাগে অংশ নেন। লাল টি-শার্ট পরা কয়েকজন নারী দৌড়বিদকে হিজাব বা মাথা কোনও কাপড়ে ঢেকে রাখতে দেখা যায়নি, যা দেশটির রক্ষণশীল মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া দমনমূলক নীতির প্রত্যাখ্যানের বার্তা হিসেবে ওই নারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সমাজের প্রগতিশীল অংশ। তবে, বর্তমান ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে তৎক্ষণাৎ বলপ্রয়োগ করেছে ইরান সরকার।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, কেবল হিজাব আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং পুরো ম্যারাথন আয়োজনের প্রকৃতি ছিল “অগ্রহণযোগ্য”। কিশের প্রসিকিউটর জানান, দৌড়টি যেভাবে আয়োজন করা হয়েছিল, সেটাকেই ছিল “সামাজিক শালীনতার লঙ্ঘন”। অবশ্য ‘শালীনতা’র মাপকাঠিতে ঠিক লঙ্ঘনটা কোথায় হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
ইরানে রাজনীতির ভবিষ্যৎ আলোচনায় হিজাব ইস্যু বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। কখনও কর্তৃপক্ষ কিছুটা শিথিলতার লক্ষ্মণ দেখালেও নারীদের নিজের জীবন স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য দমন-পীড়ন চালানো হয়। তিন বছর আগে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মাথার কাপড়ের ফাঁক দিয়ে কয়েক গোছা চুল দেখে যাওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে হাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়, যা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছিল বলে ঘোষণা দেয় পুলিশ।
কিন্তু আমিনির মাথায় আঘাতের চিহ্ন এবং হিজাব নিয়ে কর্তৃপক্ষের বহু বছরের দমনপীড়নের ইতিহাসের কারণে, তাকে পুলিশি হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করে জনগণ। তখন থেকে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে অনেক নারী প্রকাশ্যে হিজাব ছাড়াই বের হন, যা সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
নারীদের পোশাকে নজরদারির জন্য গোয়েন্দাদের নতুনভাবে নামানো হবে বলে হুঁশিয়ার দিয়েছেন বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেইন মোহসেনি ইজেই। তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত’ পোশাক–পরিচ্ছদ ও ‘অনাবৃত’ অবস্থাকে উৎসাহিত করা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।
প্রকৃত অপরাধ তদন্তের বদলে কে কী পড়লো, তা দেখার জন্য গোয়েন্দাদের নামিয়ে দিলে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কী হবে এবং নারীদের দেহের দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার গুরুদায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির সদস্যরা পুরুষ হবেন নাকি নারী- সে বিষয়ে ওই বক্তব্যে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্য করুন