
সকালবেলা প্রতিবেদক, ঢাকা
ফ্যাসিস্ট দোষরদের পরিকল্পিত সুক্ষ ষড়যন্ত্রে ফেঁসে যাচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ। তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে একটি ভিডিও’র মাধ্যমে। বিতর্কিত এ ভিডিওটি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। অপরদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তরা জানান, একটি কুচক্রীমহল ভিডিওটি এডিট করে বানানো হয়েছে শুধুমাত্র তাদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলের পুরো সময়টাই ডিআরএম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছেন। করা হয়েছে বঞ্চিত। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তাকে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরপরই শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। সক্রিয় হয়ে উঠে রেলওয়েতে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েতে শীর্ষ মূল পদগুলোর অধিকাংশতেই ফ্যাসিস্ট দোসররা দায়িত্বে আছেন। রেলওয়েতে তাদের সিন্ডিকেট-ই খুবই শক্তিশালী। পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরও তারা যা চায় তাই হচ্ছে। মহিউদ্দিন আরিফ গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ডিআরএম পদে যোগদানের পর রেলের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। তার এই সক্রিয়তায় রেলের ভেতরে থাকা ‘ফ্যাসিস্ট আমলের’ সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট চরম ক্ষুব্ধ হয়। অভিযোগ উঠেছে, সেই সিন্ডিকেটই পরিকল্পিতভাবে এই ভিডিও বানিয়ে মহিউদ্দিন আরিফকে বদলি করার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সফল হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রের আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ভিডিওতে ডিআরএম’র পিএ-এর কাছে পাঁচ শত টাকার যে নোট দেয়া হয়েছে সেটি খুবই সামান্য বলে মনে হয়েছে। এতো অল্প টাকা কোনো ঠিকাদারী কাজের কমিশন হতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় এটি নাসির উদ্দিনের ব্যাক্তিগত কোনো লেনদেন হতে পারে। তাছাড়া ডিআরএম মহিউদ্দিন আরিফ শুধুমাত্র বলেছেন নাসির উদ্দিনের কাছে আইডি দিয়ে যেতে কোনো অর্থ লেনদেন করতে তিনি বলেননি।
জানা গেছে, রেলওয়ের সদ্য সাবেক একজন ডিআরএম পুনরায় এই পদের দায়িত্বে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফ্যাসিস্ট দোসর এই কর্মকর্তা আওয়ামী সরকারের আমলে ছিলেন দোর্দন্ড প্রতাপশালী। ফ্যাসিস্ট দোষরদের এই চক্রটিই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা তৈরি করে সম্প্রতি রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কিছু ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া সহ কতিপয় গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ডিআরএম’র পিএ নাসির উদ্দিনকে অল্প কিছু টাকা একজন দিচ্ছেন, তবে তাদের হাতের অংশ ছাড়া অন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই ভিডিওটির সাথে রেলওয়ের ডিআরএম মহিউদ্দিন আরিফকে জনৈক ব্যাক্তি তার দিকে খেয়াল রাখতে বলেন এবং তখন ডিআরএম তাকে বলেন আপনার আইডি পিএ নাসিরের কাছে দিয়ে যান। যা ডিআরএমগণ সচরাচর অনেককেই এক প্রকার শান্তনা হিসেবে বলে থাকেন। আর এটিকে যুক্ত করে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের মতো করে তৈরি করে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পিএ নাসিরকে টাকা দেয়ার ভিডিওটির সঙ্গে ডিআরএমের এই বক্তব্য যুক্ত করে এটিকে ‘প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন’ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমে পিএ নাসির উদ্দিনকে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অজুহাতে ডিআরএম মহিউদ্দিন আরিফকেও তার পদ থেকে বদলি করে রেল ভবনে পদায়ন করা হয়। এই আকস্মিক বদলি রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আমার সিটে বসে অফিস স্টেশনারি লেনদেনের কিছু টাকা একজন থেকে খুচরা করে নিয়েছি। আর সেটিকে কৌশলে কে বা কারা গোপনে এই ভিডিও ধারণ করে ডিআরএম স্যারকে বিতর্কিত করতে তার ছবির সঙ্গে যুক্ত করে যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। এটা আমাকে জড়িয়ে ডিআরএম স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাকে ডিআরএম অফিস থেকে সরানো এবং স্যারকে বিতর্কিত করে সরিয়ে দেয়ার জন্যই এটি করা হয়েছে। আমি এর সুবিচার চাই।”
রেলওয়ের ডিআরএম মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, “অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এডিটিংয়ের মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার এবং আমার হারানো সম্মান ফিরে পাবো।”