
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) আকস্মিক পরিদর্শনের পর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এলেও, সেই দায়ভার চাপানো হয়েছে এক অসহায় ঝাড়ুদারের ওপর। মূল অভিযুক্ত কর্মকর্তারা লঘু শাস্তি পেলেও, চাকরি হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১২ বছর ধরে দৈনিক মাত্র ১০০ টাকা মজুরিতে কাজ করা নাসিমা খাতুন।
গত ১০ অক্টোবর কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জয়পত্র কাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এই ঘটনা ঘটে।
অকস্মাৎ পরিদর্শন ও অনিয়ম: সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাক আহমেদ কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ওই ভূমি অফিস পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তহশিলদার ও পিয়নসহ কোনো দায়িত্বশীল কর্মচারীকে পাননি। উল্টো পলাশ ও আব্দুর রাজ্জাক নামের দুই বহিরাগত ব্যক্তিকে সরকারি কম্পিউটার ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কাজ করতে দেখেন। সরকারি অফিসে বহিরাগতদের এমন কর্মকাণ্ডে তিনি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
‘বলি’ হলেন নাসিমা: পরিদর্শনকালে অফিসের ঝাড়ুদার নাসিমা খাতুন বাইরে থেকে ফিরে জেলা প্রশাসককে চিনতে না পেরে তার পরিচয় জানতে চান। অভিযোগ রয়েছে, এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ‘মাস্টার রোল’-এ কর্মরত স্বামীহারা নাসিমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
নাসিমা খাতুন জানান, তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ঝাড়ুদারের কাজের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের রান্নার কাজও করতেন। দৈনিক মাত্র ১০০ টাকা এবং রান্নার জন্য পাওয়া সামান্য অর্থেই তার সংসার চলত। চাকরি হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুজা মন্ডলের কাছে গিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।
কর্মকর্তাদের বদলি, ঝাড়ুদারের বিদায়: অনুপস্থিত তহশিলদার নুরুল ইসলাম ও পিয়ন ইমরানকে শোকজ করা হলেও, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নামমাত্র শাস্তি হিসেবে তাদের শুধু বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ, দরিদ্র নাসিমাকে সরাসরি ছাঁটাই করা হয়েছে।
নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ: এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাসিমাকে ছাঁটাই করার সুযোগে উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে উত্তর শ্রীপুর গ্রামের মারুফ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে নতুন ঝাড়ুদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: তৎকালীন নায়েব তহশিলদার নুরুল ইসলাম দাবি করেন, তার স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি ছুটিতে ছিলেন।
অন্যদিকে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মইনুল ইসলাম খান জানান, নায়েব ছুটিতে ছিলেন এবং পিয়ন একটি ফাইল নিয়ে কালিগঞ্জে গিয়েছিলেন। ঝাড়ুদার নাসিমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভুল স্বীকার না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’’ তবে সেই ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ কারা, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি।
এম.এম/সকালবেলা