
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে সদ্য পদত্যাগকারী আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ উদ্দেশ্যে বড় ধরনের নির্বাচনি বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, তিনি এ সংক্রান্ত আরও কিছু প্রস্তাব আগাম অনুমোদন করে গেছেন, যেগুলো ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে তৃতীয় কিস্তি হিসেবে বরাদ্দ হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি—নির্বাচন সামনে রেখে এসব বরাদ্দের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) জারি হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে এবং সব প্রার্থীর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সুযোগের সমতা) নষ্ট হতে পারে। তারা এই ধরনের বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি করেছেন।
টার্গেট: স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশে ৬৪ জেলা, ৪৯৫ উপজেলা ও ৩২৮ ইউনিয়ন পরিষদকে টার্গেট করে নির্বাচনি বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মোট বরাদ্দ: সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় মোট ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকার জিও বরাদ্দ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পভেদে এগুলোর পরিমাণ ২০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
বিশেষ মনোযোগ: তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বেশ কিছু ‘পছন্দের আসনে’ এই বিশেষ বরাদ্দগুলোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়ে গেছেন আসিফ মাহমুদ। খুলনায় ৩১০টি বরাদ্দ প্রস্তাব অনুমোদনের একটি তালিকা হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যায়, একটি বিশেষ আসন ঘিরে বেশিরভাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দের ধরণ: এসব বরাদ্দের মধ্যে বেশিরভাগই নগদ টাকা। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই নগদ অর্থ নির্বাচনের আগে পছন্দের প্রার্থীর কর্মীদের হাতে চলে যেতে পারে, যা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করবে।
আগাম অনুমোদন: বিশেষ বরাদ্দ সংক্রান্ত আরও কিছু প্রস্তাব আগাম অনুমোদন করে গেছেন আসিফ মাহমুদ, যেগুলো তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল। আসিফ মাহমুদের সই করা এসব প্রস্তাব সারাদেশে বিশেষ বিশেষ আসনকে কেন্দ্র করে।
খুলনার দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
ডুমুরিয়ার আন্দুলিয়া বায়তুন নূর জামে মসজিদ সংস্কার/উন্নয়ন প্রকল্প।
একই উপজেলার বরুনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংস্কার প্রকল্প।
পাশের উপজেলা ফুলতলার দামোদর শীতলাতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির সংস্কার/উন্নয়ন প্রকল্প, কালিকাপুর সার্বজনীন গোবিন্দ মন্দির সংস্কার/উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করে চলে গেলেও তার পিএসসহ ঘনিষ্ঠজনেরা এখনও মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। তারা জিও জারির ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাবেক উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠদের না সরালে সরকারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক রাখতে হলে এসব উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাবের জিও যাতে জারি না হয় সেদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও দেওয়া হয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশে তিনি গত ১০ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেছেন।
মারুফ/সকালবেলা