
সুমন ঘোষ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এক সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মানিক মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতেই ভূক্তভোগীর মা বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ও অভিযুক্তকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কৃষক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রবিবার দুপুরে উপজেলার ঘড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী ওই ছাত্রী ঘড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত মানিক একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে।
ভূক্তভোগী ও পরিবারের অভিযোগ:
ভূক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার বাবা ভ্যানচালক মনছুর আলী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। মা অতি কষ্টে ধার দেনা করে তার পিতার চিকিৎসা এবং মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থী বাড়ির পাশের পূর্বচড়ায় শাক তুলতে গেলে অভিযুক্ত মানিক মিয়া তাকে একা পেয়ে মুখ চেপে ধরে পাশের মেশিন ঘরে নিয়ে যায় এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সে পালিয়ে যায়।
অসহায় অবস্থায় মেয়েটি বাড়িতে ফিরে জানালে তার মা তাকে নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযোগ দিতে যান। এসময় মানিকের ছেলে ও পরিবারের লোকজন উল্টো তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের।
ভুক্তভোগীর মা গণমাধ্যমকে জানান, তারা থানায় অভিযোগ দিতে যাওয়ার সময় নারান্দিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মাসুম একজন সিএনজি চালককে ফোন দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে থানায় না গিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। তিনি অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীর পরিবার সাংবাদিকদের জানালে শালিসী বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়। তিনি আরও জানান, ঘড়িয়া ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক মাসুম সিএনজি চালকের মাধ্যমে তাদের ‘দরবার’ করার জন্য ডেকে এনে কৌশল অবলম্বন করে মানিককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
ভূক্তভোগী ছাত্রী তার ওপর হওয়া অন্যায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, "আমার সাথে যা হয়েছে, তা যেন আর অন্য কারোর সাথে না হয়।"
নেতার বক্তব্য ও পুলিশের পদক্ষেপ:
এ বিষয়ে নারান্দিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, সামাজিকভাবে তাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি ফোন দিয়ে থানায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দেন, সামাজিকভাবে অনেক কিছুই মিমাংসা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন মহল থেকে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে সংবাদ বন্ধের অনুরোধও জানান।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।" ইউনিয়ন কৃষক দলের আহ্বায়ক মাসুমের বিরুদ্ধে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এটি তদন্তের বিষয়, তবে মামলা যেহেতু হয়েই গেছে, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
এম.এম/সকালবেলা